আন্তর্জাতিক

সৌদিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কওমি সনদ গ্রহণের অনুরোধ

সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী ড.আবদুল লতিফ বিন আবদুল আজিজ আল শায়খের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনূষ্ঠিত হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি রিয়াদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল সৌদি আরবের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কওমি সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান।

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কওমি সনদের স্বীকৃতি, কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে মাস্টার্সের সমমান প্রদান, দেশের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে কওমি পড়ুয়া ছাত্র, আলেম সমাজের ভূমিকা এবং প্রচলিত অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের তুলনায় কওমি ছাত্র-ছাত্রীদের ইসলাম ও আরবি ভাষায় বহুমাত্রিক যোগ্যতা ইত্যাদি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয় উক্ত বৈঠকে। সৌদি মন্ত্রীও মনযোগ সহকারে সব কথা শুনেন এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন।
.
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক কওমি সনদ ও কওমি ডিগ্রির স্বীকৃতি প্রদান এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এতে সাধারণ শিক্ষিত সমাজে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত লক্ষ লক্ষ কওমি ছাত্র ও আলেম-উলামাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়। সমাজসেবা, চাকরি, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এতোদিন বিষয়টি দেশের অভ্যন্তরে থাকলেও এই প্রথম সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুবাদক সাদেক হোসেন জানান, এর আগে বহির্বিশ্বে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দু’একজন কওমি ছাত্র আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিল । এখন এই সংখ্যা আরও বাড়বে ।তিনি বলেন, এমন একটি মহান উদ্যোগের সাক্ষী হতে পেরে আমি নিজেকে গর্ববোধ করছি।
.
বৈঠকে সৌদি ইসলাম বিষয়ক উপমন্ত্রী ড, ইউসুফ বিন মুহাম্মদ, ধর্ম সচিব ড. আবদুল্লাহ আস-সামিল, বিদেশে সৌদি মিশনসমূহে নিযুক্ত ধর্মীয় এ্যাটাশে বিষয়ক মহাপরিচালক শায়খ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহিদ আল-আরিফি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, ধর্ম সচিব আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

অন্যদিকে, ২৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার বিকালে মক্কায় সৌদি হজ্ব এবং ওমরাহ মন্ত্রণালয়ে হজ্ব ও ওমরাহ মন্ত্রী ড. সালেহ মোহাম্মদ বিন তাহের বেনতেনের সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বৈঠক করেন । বৈঠকে এজেন্সী প্রতি হজযাত্রীর সর্বনিম্ন সংখ্যা ১০০ করার বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ সম্মত হয়েছেন। মিনায় দ্বিতল খাটের বিষয়টিও বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়াও হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন বাংলাদেশে করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। মিনা আরাফা মুজদালিফায় হজযাত্রীদের সেবা নিশ্চিতকরণ এর বিষয়ে একমত হয়েছেন। একাধিকবার হজ ও ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকদের অতিরিক্ত ফি মওকুফসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ বেসরকারি হজ্ব এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ্ব এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (হাব) মহাসচিব এম শাহাদাত হোসেন তসলিম এই তথ্য জানান । বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ধর্ম সচিব আনিসুর রহমান, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, জেদ্দা বাংলাদেশ কন্সুলেটের কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দিন, কাউন্সিলর (হজ্ব) মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, কনসাল (হজ্ব) আবুল হাসান, হাব মহাসচিব এম শাহাদাত হোসেন তসলিম।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ্যাড.শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফরে আসেন।সফরকালে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী, ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রী ছাড়াও ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ (রাবেতা আল আলম আল ইসলামী), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক, পবিত্র মসজিদ আল হারামের গ্র্যান্ড ইমাম, মোয়াসসাসা কর্তৃপক্ষ, মদিনার আদিল্লার চেয়ারম্যানের সাথে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর বৈঠকের কথা রযেছে।

প্রতিবেদক:সাগর চৌধুরী(সৌদি আরব)
২৬ ফেব্রুয়ারি,২০১৯

Share