এক দশক আগে চাঁদপুর থেকে সিলেটে যান চা বিক্রেতা আব্দুস শহীদ। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় আশ্রয় নেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে। জীবিকা নির্বাহে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়ও চা বিক্রি শুরু করেন শহীদ। সেখান থেকেই অন্ধকার জগতে পা দেন তিনি।
অবস্থার পরিবর্তন ঘটে শহীদের। ক্রমশ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ আসে তার হাতে। শুধু মাদকই নয়, সময়ের বিবর্তনে অন্ধকার জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন তিনি।
এক সময়ের সাধারণ চা দোকানি হয়ে ওঠেন রেলওয়ে স্টেশন এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। রেলওয়ে পানির ট্যাঙ্ক, চান্দের কলোনিসহ বিভিন্ন স্থান নিয়ন্ত্রণে আসে তার। নিজের শক্তিমত্তা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, প্রায় ৭ বছর আগে মাদক ব্যবসার টাকা দিয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেঁতলী ইউনিয়নের আহমদপুরে জমি কিনে তিনতলা আলীশান বাড়ি করেন শহীদ। এরপর থেকে সেখানেই ছিল তার বসবাস।
তিনতলা ভবন এখন হয়েছে পাঁচতলা। ১৫ শতকের স্থলে এখন সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশে তার জমির পরিমাণ ১শ’ শতক। মাদক ব্যবসার টাকায় ১০টি গাড়ির মালিক ছিলেন শহীদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফ এলাকায় শহীদের শ্বশুর বাড়ি। সেখান থেকে ইয়াবা আসে সিলেটে। এই ব্যবসায় তার শ্বশুরও যুক্ত রয়েছেন এবং তার মাধ্যমেই সিলেটে ইয়াবা আসতো শহীদের হাতে। মাদক ব্যবসায় শহীদের স্ত্রীও জেল খেটেছেন।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেঁতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উছমান আলী বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় পাঁচ বছর আগে শহীদকে নোটিশ করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে হাজির হতে বলি। জিজ্ঞাসাবাদে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেছিলেন, নতুন বাড়ি তৈরি করেছি, যে কারণে স্থানীয়রা তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে।
তিনি জানান, প্রায় ৮ মাস আগে শহীদের বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। সেসময় তিনিও সঙ্গে ছিলেন। তখন ৭ হাজার পিস ইয়াবা, ৪ লাখ টাকা, দুই রাউন্ড গুলি ও একটি পিস্তলসহ শহীদ ও তার স্ত্রীকে আটক করা হয়। ওই সময় র্যাবের সহায়তায় বাড়িটি সিলগালা করা হয়। এরপর কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসা চালান শহীদ।
বুধবার (২১ নভেম্বর) ভোরে তাকে নিয়ে নগরের পারাইরচক লালমাটিয়া এলাকায় মাদক উদ্ধারে অভিযানে যায় র্যাব। এসময় তার সঙ্গীরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এসময় পালাতে গিয়ে শহীদের মুত্যু হয়, বলে জানিয়েছে র্যাব।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল বলেন, নিহত শহিদ কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় মাদকের ৭টি, অস্ত্রের ১টি এবং শাহ পরাণ থানায় মাদকের দু’টি মামলাসহে মোট ১০টি মামলা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় তার নাম রয়েছে।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ নভেম্বর, ২০১৮