চাঁদপুর

ঐতিহাসিক ছয়-দফা আন্দোলনে চাঁদপুরের চন্দ্রকন্যা আমেনা বেগম

আশিক বিন রহিম।। আজ ঐতিহাসিক ছয়-দফা দিবস। ছয়-দফাকে বলা হয় বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬-দফা দাবির পক্ষেই দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। এই ছয় দফা দাবির খসড়া তৈরির সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন চাঁদপুরের চন্দ্রকন্যা আমেনা বেগম। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার এই আলোকিত নারী ছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক সংসদ সদস্য।

১৯৬৬ সালের ৭ই জুন চাঁদপুরের আরেক সূর্যসন্তান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর সাথে তিনি সাধারণ ধর্মঘট সংগঠিত করেন। এই ধর্মঘটটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জুুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা যে ঘনিয়ে আসছে এমন একটি বার্তাও দিয়েছিল ঐতিহাসিক এই আন্দোলন। এই দিনেই আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গি, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআর’র গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন বাঙালি শহীদ হন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দলের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেফতার করা হলে ১৯৬৬ সালের ২৭শে জুলাই আমেনা বেগমকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দলের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমেনা বেগম স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার চাপ সৃষ্টি করেন ও আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলেন।

তিনি ছয় দফা কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ও দলের তৃনমূল আন্দোলনকারীদের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে মুক্তিকামী বাঙালীদের শ্লোগান ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা যমুনা’ এর বিপরীতে পাকিস্তানপন্থীরা ব্যঙ্গ করে এমনো শ্লোগান তোলে ‘ তোমার আমার ঠিকানা, আমেনা বেগমের বিছান’। আমেনা বেগম ১৯৬৮ সালের এগারো দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের আইয়ুব বিরোধী সমাবেশেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আমনা বেগম ১৯২৫ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জন্মগ্রহণ করের। তিনি ১৯৪০ সালে ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন ও ১৯৪২ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে ইউনাইটেড ফ্রন্টের তৎকালীন কুমিল্লা-সিলেট আসন থেকে নারীদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের নারী বিষয়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন ও একই পদে তিনি ১৯৭০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

এ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে দলে তার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেন। যার ফলে ১৯৭০ সনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ দাবি করেন। কিন্তু তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত না করায় তিনি আওয়ামলীগ থেকে পদত্যাগ করেন ও আতাউর রহমান খান কর্তৃক নির্মিত নতুন দল জাতীয় লীগে যোগদান করেন।

১৯৭০ সালের ২০শে আগস্ট তাকে জাতীয় লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়। আমেনা বেগম ১৯৭০ সালের নির্বাাচনে ঢাকা নয় আসন থেকে জাতীয় লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। পরবর্তিতে জাতীয় লীগের সভাপতি পদ গ্রহণ করেন। এরপর থেকে আমেনা বেগম আওয়ামী লীগ বিরোধী হয়ে উঠেন। চাঁদপুরের এই আলোকিত নারী ১৯৮৯ সালের ৭ই এপ্রিল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যঋণ: উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক।

Share