মাত্র ৫৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে চাঁদপুরে হাজীগঞ্জের ১২৯ নং সিহিরচোঁ মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরমধ্যে শিশু শ্রেণিতে ১০ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৯ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১০ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৯ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিদ্যালয়ে প্রতিমাসে শিক্ষক বেতন বাবদ সরকার প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করছে। পেয়েছে স্লিফের ৫০ হাজার এবং প্রাক-প্রাথমিকে জন্য ১০ হাজার টাকাসহ মোট ৬০ হাজার টাকা।
এ ছাড়াও শিক্ষাথীরা উপবৃত্তিসহ নিয়মিত সরকারি সকল বরাদ্দ পাচ্ছে বিদ্যালয়টি। অর্থাৎ সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করতে না পারায় বিদ্যালয়টি দিন দিন শিক্ষার্থীহীন হয়ে পড়ছে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিও এ ব্যাপারে কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক থাকার পরেও তারা শিক্ষার্থী বাড়ানোর বিষয়ে নূন্যতম চেষ্টা করেনি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সম্প্রতি একজন শিক্ষক বদলীজনিত কারনে বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক রয়েছে।
এদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রতি মাসে একবার করে ক্লাস্টার প্রধান বা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা বিদ্যালয় পরিদর্শন করার কথা থাকলেও গত ৩ মাসে কোন কর্মকর্তা বিদ্যায়ল পরিদর্শনে যাননি। যারা পূর্বে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা শিক্ষার্থী বাড়ানোর বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে কার্যকর কোন তথ্য দিতে পারেনি প্রধান শিক্ষক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের খান এর একান্ত ইচ্ছায় একটানা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ডা. আব্দুল হাই। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটানা সভাপতি একই ব্যক্তি থাকতে পারবে না বলে বিজ্ঞপ্তি রয়েছে।
এমনকি উভয় মিলে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি পাশের দিঘি সরকারি কোন অনুমতি না নিয়ে এক লক্ষ টাকা লিজ দিয়েছে। সেই টাকার কিছু অংশ বিদ্যালয়ের পাশে মাটি কাটিয়ে বাকী টাকা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ভাগ ভাটরা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া প্রতিবছর ক্লাস্টারের ৬০ হাজার ৭০ হাজার টাকার কোন হদিস নেই বল্লেই চলে। নাম মাত্র বিদ্যালয়ের চিত্রাঅংকন করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
অবশ্য এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল খায়ের খান জানালেন ভিন্ন তথ্য। তিনি বলেন, এই এলাকায় জন্মহার কম, তাই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম।
তিনি আরো বলেন, সিহিরচোঁ ছোট একটি গ্রাম। এই গ্রামে আরো একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি ফাজিল মাদরাসা রয়েছে। যার ফলে, তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। তবে একটানা ডা. আব্দুল হাই সভাপতির পেছনে বিকল্প কোন লোক এগিয়ে না আসায় দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের টানা তিনবারের সভাপতি ডা. আব্দুল হাই বলেন,আমি চাই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাড়–ক। এ জন্য আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়াবো। এবার আর বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্বে দিতে ছাইলেও থাকবো না। অর্থ আত্মসাতের মত এমন কোন কাজ করিনি। আর কোন অনিয়ম হলেও তা প্রধান শিক্ষক এর জবাব দিবেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এ.কে.এম মিজানুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হ্রাসের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে সেই সাথে আগামিতে ডা. আব্দুল হাইকে কোন ভাবে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হবে না। অর্থ আত্মসাৎ এর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, হাজীগঞ্জ, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯