চাঁদপুর

সুন্দরের বিড়ম্বনায় চাঁদপুরের আলোচিত শাহাবুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ

অতিমাত্রায় সুন্দর হওয়ার বিড়ম্ভনায় পড়েছে দেশব্যাপি ব্যপক আলোচিত চাঁদপুরের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শাহাবুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ। নান্দনীক স্থাপত্যশৈলীর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে এখন দর্শনাথীদের সামাল দিতে শিক্ষাকার্যক্রম মারা´কভাবে ব্যহত হচ্ছে।

অনেকেই বিষয়টিকে হাস্যরস করে বলছেন ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা। সম্প্রতিক সময়ে এই প্রতিষ্ঠানটির বেশকিছু ছবি ফেইসবুকের কল্যানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে একের পর এক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল ও টিভি চ্যানেলে প্রচুর সংবাদ প্রকাশ পায়। যার ফলশ্রুতিকে প্রতিদিনই স্কুল দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে সুন্দর পিপাসু মানুস।

এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা। এসসকল দর্শনাথী স্কুলের মাঠ থেকে, বারান্দ এমন কি ক্লাসরুমে ঢুকেও সেলফি তুলে তা ফেইসবুকে আপলোড করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘœতা সৃষ্টি হওয়ায় স্কুল কতৃপক্ষ বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানের গেইটে স্কুল চলাকালীন ( সকাল ৯ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত) দর্শনার্থীর ভেতরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।

সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে সবুজের ভিড়ে একটি আশ্চর্য সুন্দর স্থাপনা এই শাহাবুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির শরীরময় সবুজের ফাঁকে ফাঁকে লাল-হলুদ রঙের প্রলেপ। উপরে বাহারী কারুকাজ খচিত সিমেন্টের টিনশেড।

দূর থেকে দেখলে প্রথমেরই মনে হতে পারে এটি বিদেশ্য কোনো সেনাবাহিনীর দপ্তরের স্থাপনা। দূরত্ব কমিয়ে আরেকটু কাছে গেলে মনে হবে এটি উন্নত বিশ্বের কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান কিংবা ধর্ণাঢ্য কোনো ব্যক্তির রিসোর্স।

কিন্তু স্থাপনাটির প্রধান ফটকে চোখ রাখা কিংবা ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশের পরেই আপনার সমস্ত কৌতুহল ভেঙ্গে যাবে। দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনানাটি এরইমধ্যে দেশব্যাপি পরিচিত হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কিছু ছবি ভাইরাল হবার পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন এর অনন্য স্থাপনা শৈলী দেখতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুরের কৃতি সন্তান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন অনু ২০১৫ সালের অক্টোবরে লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ওই বছরই ১১৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে নান্দনিক এই স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি।

শাহাবুদ্দিন ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পায় ‘শাহাবুদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। দুই বছর ধরে স্কুলের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। এখানে প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় ১৬৮ জন ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। এই স্কুলে বর্তমানে ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন।

শাহাবুদ্দিন প্রাইমারি অ্যান্ড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শঙ্কর কুমার সাহা বলেন, প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা চ্যালেঞ্জের বিষয়। এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় গড়ে তুলতে শিক্ষকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের বিদ্যালয়ে শুধু খেলাপড়াই হয় না।

এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত খেলাধুলাও করানো হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত চালু রয়েছে। আশা করি আগামী বছর থেকে হাইস্কুল ও চালু হয়ে যাবে। এবং ধারাবাহিকভাবে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমও চালু করা হবে। আমাদের এই বিদ্যালয় দেশের একটি মডেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
১৩ জুলাই ২০১৯

Share