আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের স্যানিটেশন ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। যার কারণে নোংরা ও অসাস্থ্যকর পরিবেশে টয়লেট ব্যবহার করছে রোগী ও রোগীর লোকজন। হাসপাতালের স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিদিনই রোগীদের কাছ থেকে নানা অভিযোগ উঠে আসছে।
দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করা যায়, হাসপাতালের স্যানিটেশন ব্যবস্থা একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের ২য় তলার পুরুষ ওয়ার্ড, ৩য় তলার শিশু ওয়ার্ড, পেইং ও কেবিন ব্লক, এবং ৪র্থ তলার মহিলা ওয়ার্ডে থাকা টয়লেট গুলো নোংরা পরিবেশে পড়ে আছে।
ওইসব ওয়ার্ডের টয়লেটগুলোর বেশ ক’টির দরজা নেই। অন্যগুলোর দরজা থাকলেও তারমধ্যে কিছু কিছু দরজার সিটকানী নেই। টয়লেটের সদর দরজার সামনে মেঝেতে পানি জমে থাকে। বেসিংগুলো ব্যবহার না হওয়ায় তার চারপাশ জুড়ে পড়ে আছে ময়লা আর্বজনার স্তুপ। অনেক জায়গায় টয়লেটের পাইপ ভেঙ্গে পানি পড়ছে। দেয়ালে শ্যাওলা জমে লাল হয়ে আছে, অনেকাংশে ময়লা আর্বজনার স্তুপ জমে আছে।
পাইপ দিয়ে টয়লেটেরে আউট পানি ঠিকমতো নিস্কাশন না হওয়ায় টয়লেটের মেঝেতে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। আর ওই জমে থাকা পানির ওপর দিয়েই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিদিন টয়লেটে আসা যাওয়া করছে রোগী ও রোগীর লোকজন।
অনেকে জানান, হাসপাতালের দুর্গন্ধ এবং টয়লেটের নোংরা পরিবেশের কারনে অনেক লোকজন আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের এসব টয়লেট পরিস্কার পরিছন্ন করার জন্য সরকারিভাবে যেসকল সুইপার (পরিছন্নকর্মী) নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সেগুলো ঠিকমতো পরিস্কার পরিছন্ন করেননি।
হাসপাতালের অনেক স্টাফরা জানান, হাসপাতালের থাকা টয়লেট গুলো প্রদিদিন নিয়মিত ৩/৪ বার পরিস্কার করার কথা থাকলেও পরিছন্নকর্মীরা তাদের দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে দিনে দু, একবার তা পরিস্কার করেন। আবার কোন কোন দিন দায়সার মুক্তভাবে একবার পরিস্কার করেই দায়িত্ব অবহেলা করেন। যার কারণে টয়লেটগুলো পরিবেশ একেবারেই নোংরা থাকে। আর ওই নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই টয়লেট সারতে হয় রোগীদের।
এভাবেই নানা দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন জেলাবাসি। এছাড়াও রোগীদের কাছে আরো নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। হাসপাতালে ভর্তিকৃত কয়েকজন রোগী অভিযোগ করে বলেন, যেসকল রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
হাসপাতাল থেকে তাদের বেডের পাশে ময়লা ফেলার জন্য কোন পাত্র এবং টেবিল দেয়া হয়না। তাদের আরো অভিযোগ যখন হাসপাতালের রোগীদের বিছানার পাশে ময়লা আবর্জনা জমে থাকে তখন যদি কোন আয়াকে ময়লা ফেলার কথা বলা হয় তখন তারা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন।
কয়েকবার বলার পর তারপর তারা সে ময়লা ফেলার জন্য যান। এমনকি একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে তাদের বিছানায় কোন চাদর এবং বালিশও দেয়া হয়নি বলে জানান, বেশ কিছু রোগীর অভিবাবকরা।
এদিকে এব্যাপারে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক’জন নার্স ইনচার্জ জানান, প্রত্যেক রোগীদের বেডের পাশেই টেবিল এবং ময়লা ফেলার পাত্র দেয়া হয়। যখন হাসপাতালে একাধিক রোগী ভর্তি হয় তখন দেখা যায়,আলাদা বিছানা পাতার কারনে তাদেরকে তা দেয়া সম্ভব হয়নি। আর দোপার সমস্যার কারনে রোগীদের মাঝে ঠিকমতো চাদর দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আনোয়ারুল আজিম জানান, রোগী এবং রোগীর লোকজনদের অসচেতনতার কারনেই হাসপাতালের টয়লেটগুলো অনেক সময় নোংরা থাকে। আগে যেখানে টয়লেটগুলো দিনে দুই বার ওয়াশ করা হতো। সেখানে এখন দিনে চার বার ওয়াশ করা হয়। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রথমে দিনে ৩ বার পরবর্তীতে দিনে ৪ বার ওয়াশ করার নিয়ম করেছি। তবুও তা পরিস্কার রাখা সম্ভব হচ্ছেনা।
দেখা যায় হাসপাতালে যেসব রোগী এবং রোগীর লোকজন টয়লেট ব্যবহার করে তারা ঠিকমতো পানি ব্যবহার করছেনা। যেখানে যে পরিমান পানি ব্যবহার করার কথা সেখানে তারা তার কিছই করছেনা।
তিনি বলেন, টয়লেটগুলো শত পরিস্কার পরিছন্ন রাখলেও যতোদিন না পর্যন্ত রোগী এবং রোগীর লোকজন সচেতন না হবে ততোদিন পর্যন্ত তা পরিস্কার পরিছন্ন রাখা সম্ভব হবেনা।
করেসপন্ডেট
৯ মার্চ,২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur