মাগুরায় তাকে সবাই ফয়সাল নামেই চেনে। পরিবারের মানুষজনের কাছে এখনো তিনি ফয়সালই। অনেকেই জানেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ডাক নাম ফয়সাল।
জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৩ মার্চ মাগুরায়। সাকিবের বাবা মাশরুর রেজা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মাতা শিরিন শারমিন একজন গৃহিণী। পারিবারিক বলয়ের কারণে ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল ছিলেন সাকিব। তবে সেই বলয়ের কারণে সাকিবের হওয়ার কথা ছিল ফুটবলার। সাকিবের বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে এবং এক কাজিন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতেন।
কিন্তু সাকিবের গন্তব্য ছিল ভিন্ন দিকে। একজন ক্রিকেটার সারা বিশ্ব কাঁপানোর যে অদৃষ্টের লিখন ছিল, সাকিব সেদিকেই হাঁটছিলেন। সাকিবের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে ফুটবলার হোক। একটা সময় সাকিব নিজেও ফুটবলার হতে চাইতেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জয় করে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেলে সারা দেশে শুরু হওয়া ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত হলেন সাকিবও। তাই শেষ পর্যন্ত সাকিব ক্রিকেটকেই বেছে নিলেন। তার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
২০০১ সালের দিকে ক্লাস সেভেনে থাকাকালীন আলোকদিয়ার মাঠে সাকিব গিয়েছিলেন ভাড়ায় খেলতে। বিধ্বংসী ব্যাটিং আর পেস বোলিংয়ে নজর কাড়লেন সবার। ভুল পড়ছেন না, ঠিকই পড়ছেন। শুরুর দিকে সাকিব আল হাসান কিন্তু পেসারই ছিলেন। আলোকদিয়ার মাঠের সেই খেলায় আম্পায়ার ছিলেন সাদ্দাম হোসেন গোর্কি। তিনি আবার স্থানীয় পর্যায়ের একজন কোচও।
সাকিবের খেলা তাকে দারুণ মুগ্ধ করল। এই মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটাতে সাদ্দাম হোসেন সাকিবের মেধাকে কাজে লাগাতে চাইলেন। তার পরামর্শে সাকিব মাগুরায় ইসলামপুরপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবে যোগ দেন। এটি মাগুরা লিগের একটি পরিচিত দল। এর আগ পর্যন্ত সাকিবের সব খেলা হয়েছিল টেপড টেনিস বলে। তখনো পর্যন্ত সাকিব আসল ক্রিকেট বলের দেখাই পাননি। সেখানেও নতুন ক্রিকেট বলে প্রথমে পেস বোলিং শুরু করেন সাকিব। জোরে বল করার মধ্যে আলাদা মজা পেতেন সাকিব। কিন্তু তার কোচ সাদ্দাম হোসেন সাকিবকে স্পিন বল শুরু করতে বলেন। সত্যিকার ক্রিকেট বল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে করা সাকিবের প্রথম বলটি ছিল স্পিন বল। এবং প্রথম বলেই উইকেট পান সাকিব।
সাকিব ২০০১ সালে বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমে মাগুরা জেলা থেকে নড়াইল ক্যাম্পের জন্য নির্বাচিত হন। নড়াইল ক্যাম্প থেকে ঢাকার বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য যে ২০ জন সুযোগ পেয়েছিল, সাকিব তাদেরই একজন। তখনই আসলে সাকিবের মূল ক্যারিয়ারের শুরু। বিকেএসপিতে ভর্তির পর বাংলাদেশের হয়ে বয়সভিত্তিক দলগুলোতে [অনূর্ধ-১৫-১৭-১৯] খেলার সুযোগ পান। আর সেখানেই মেধার স্বাক্ষর রাখেন সাকিব। পনেরো বছর বয়সে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলা সাকিব আসলে তখনই জাতীয় দলে কড়া নাড়ছিলেন।
এক নজরে…
পুরো নাম : সাকিব আল হাসান।
পরিচিত : সাকিবুল হাসান।
জন্ম : ২৪ মার্চ ১৯৮৭ মাগুরা।
বর্তমান বয়স : ৩২ বছর ৩ মাস ৩ দিন।
খেলার ধরন : অলরাউন্ডার।
ব্যাটিং ধরন : বাঁ-হাতি।
বোলিং ধরন : বাঁ- হাতি অর্থোডক্স।
খেলার ক্ষেত্র : বাংলাদেশ, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার, বাংলাদেশ ‘এ’ দল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একাদশ, বার্বাডোস ট্রাইডেন্টস, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস, ঢাকা আবাহনী, ঢাকা মোহামেডান, লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ, জ্যামাইকা তাল্লাওয়াস, করাচি কিংস, খুলনা ডিভিশন, কলকাতা নাইট রাইডার্স, পেসোয়ার জালমি, সানরাইজার্স হাইদ্রাবাদ, ওরচেস্টারশায়ার।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৩:২০ পি.এম, ২৭ জুন ২০১৯
ইব্রাহীম জুয়েল