জাতীয়

জুয়াড়িকে হোয়াটসআপে যা বলেছিলেন সাকিব আল হাসান

নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগের হাতে থাকা প্রমাণের বিস্তারিত জানিয়েছে আইসিসি। খেলাটায় অনৈতিক কাজে জড়িত বলে আইসিসির সন্দেহভাজনদের একজন, দিপক আগারওয়ালের সঙ্গে সাকিবের কথোপকথনের অনেকটুকুও আইসিসি জানিয়েছে।

সাকিব তার সঙ্গে নিয়মিত কথা চালিয়ে গেছেন, কিছু বার্তা মুছে দিয়েছেন ফোন থেকে, এমনকি ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছেন!
আইসিসির তদন্ত ও সাকিবের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে যতটুকু নিশ্চিত হতে পেরেছে আইসিসি, তা প্রকাশ করা হয়েছে বিস্তারিত।

২০১৭
সেই বছরের নভেম্বরে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে বিপিএল খেলছিলেন সাকিব। সে সময় তার পরিচিত একজন আগারওয়ালকে সাকিবের ফোন নম্বর দেন। ওই ব্যক্তির কাছে বিপিএলে খেলা আরও ক্রিকেটারদের ফোন নম্বরও চেয়েছিলেন আগারওয়াল।

মধ্য নভেম্বরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে সাকিবের সঙ্গে দেখা করতে বারবার জোর করেন আগারওয়াল।

জানুয়ারি ২০১৮
এই বছরের জানুয়ারিতে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। ওই টুর্নামেন্টের সময় আবার আগারওয়ালের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার আলোচনা হয় সাকিবের।

১৯ জানুয়ারির ম্যাচে সাকিব সেরা খেলোয়াড় হন। সেদিন সাকিবকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা পাঠান আগারওয়াল। পাশাপাশি এটাও বলেন, “আমরা কি এখানে কাজ করব নাকি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?”

‘কাজ’ বলতে এখানে দলের ভেতরের খবর বোঝানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিসি। এই যোগাযোগের কথা সাকিব আইসিসি বা বিসিবি বা কোনো ধরনের দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষকে জানাননি।

চার দিন পর আবার আগারওয়াল বার্তা পাঠান সাকিবকে, “ব্রো, এই সিরিজে কিছু হবে?” সাকিব জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, কিছু হওয়া বলতে বোঝানো হচ্ছিল দলের ভেতরের খবর জানিয়ে দেওয়াকে। যথারীতি এই ঘটনাও সাকিব সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে জানাননি।

এপ্রিল ২০১৮
২৬ এপ্রিল আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে খেলেন সাকিব। আগারওয়াল এবার একজন ক্রিকেটারের ব্যাপারে জানতে চান যে সে ওই ম্যাচে খেলছে কিনা। আবারও জানতে চান দলের ভেতরের খবর।

সেখানেই না থেমে সাকিবের সঙ্গে বিটকয়েন, ডলার অ্যাকাউন্ট নিয়ে কথা বলেন আগারওয়াল। জানতে চান সাকিবের ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত। এই আলোচনার সময়ই সাকিব বলেন, যে তিনি ‘আগে’ দেখা করতে চান আগারওয়ালের সঙ্গে।

সেদিনের বেশ কিছু বার্তা সাকিব মুছে ফেলেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানান, সেগুলো ছিল দলের ভেতরে খবর জানতে চাওয়ার কথা।

আইসিসি জানিয়েছে, ওই আলোচনার পরই আগারওয়ালকে নিয়ে সাকিবের ভাবনা হতে থাকে। আগারওয়াল একজন জুয়াড়ি হতে পারেন ভেবেও সাকিবের ধারণা হয়। তবে সেদিনের কথাও সাকিব সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে জানায়নি।

এরপর তদন্তের অংশ হিসেবে গত ২৩ জানুয়ারি ও ২৭ অগাস্ট সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানান যে, আগারওয়ালের কাছ থেকে কয়েকবার প্রস্তাব পেয়েও তিনি তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাননি। এটাও বলেন যে, তিনি জানতেন প্রস্তাব পেয়েও না জানানো মানে আইসিসির বিধি ভঙ্গ করা।

আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের কাছে সাকিব দাবি করেছেন, আগারওয়ালের অনুরোধে সাড়া দিয়ে কোনো তথ্য তিনি জোগান দেননি। আগারওয়ালের কাছ থেকে অর্থ বা উপঢৌকন নেননিও বলে দাবি করেছেন।

তিনবার প্রস্তাব পেয়েও কর্তৃপক্ষকে না জানানোর কথা যেহেতু প্রমাণিত হয়েছে, ধারা অনুযায়ী শাস্তি পেয়েছেন সাকিব। (bdnews24)

বার্তা কক্ষ, ৩০ অক্টোবর ২০১৯

Share