চাঁদপুর

শাহরাস্তিতে ভাসুরের ছুরিকাঘাতে প্রবাসীর স্ত্রী-কন্যা গুরুতর আহত

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে গভীর রাতে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে প্রবাসীর স্ত্রী ও কন্যাকে ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত করার অভিযোগ উঠেছে ভাসুরের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় প্রবাসির স্ত্রী কোহিনুর বেগম গুরুতর আহত হয়েছেন। আশংকাজনক অবস্থায় উন্নতর চিকিৎসার্থে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার(১৮ এপ্রিল) রাত ২ টায় শাহরাস্তি পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের ভাটনীখোলা উত্তর বেপারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের পরিবারের লোকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ওই বাড়ির আবদুল খালেকের পুত্র জহিরুল ইসলাম ও সালামত উল্লার পুত্র আরিফুল ইসলাম পরস্পর চাচাত ভাই। পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই জহির তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কোহিনুর ও তাদের মেয়ে মুক্তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করেছে।

তারা জানান, জহির বরাবরই বখাটে। তার স্ত্রী লাকি আক্তার তাকে ধারদেনা করে দু’বার প্রবাসে পাঠায়। একবারও সে প্রবাসে স্থির হতে পারেনি। শেষ বার প্রবাস থেকে ফিরে আসলে স্ত্রীর পূর্ব ঘোষনার আলোকে লাকি জহিরকে তালাক দেয়। এর প্রায় ১ বছর পর তালাককৃত লাকিকে আরিফের স্ত্রী কোহিনুর তার নিজ ভাই সালে আহম্মদের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জহির ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

কোহিনুরের দেবর হাবীব বলেন,জহিরের স্ত্রী লাকির সাথে তালাক হওয়ার পর সে বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যায়। মাঝেমধ্যে সে এলাকায় আসতো এবং ভাবীর সাথে খারাপ আচরনসহ হুমকি-ধমকি প্রদান করতো। ঘটনার রাতে ভাতিজা তারেক ও ভাতিজি মুক্তার ডাক চিৎকারে আমরা ঘুম থেকে উঠে আসি। এসময় ঘাতক জহির পালিয়ে যায়। ঘরে ঢুকে ভাবীকে রক্তাক্ত অবস্থায় খাটে পড়ে থাকতে দেখি।

খবর পেয়ে শাহরাস্তি মডেল থানার এসআই হাবিবুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন এবং পরিস্থিতি ভয়াবহ দেখে তাকে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। আমরা প্রথমে উয়ারুক মেডিল্যাব হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি দেখলে তাকে কুমিল্লা সরকারি মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় ভাবীর চিৎকারে ভাতিজি মুক্তা এগিয়ে গেলো জহির তাকেও ছুরিকাঘাত করে। মা ও মেয়েকে আহত করার পর বাড়ি নির্মাণের জন্য রক্ষিত ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আর ভাবীর একটি মোবাইল ফোন নিয়ে সে পালিয়ে যায় । এ ব্যাপারে আইনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

আহত কোহিনুরের মেয়ে মুক্তা জানায়, মায়ের চিৎকার শুনে আমি ঘুম থেকে জেগে দেখি জহির জেঠার হাতে বড় একটি ছুরি। ওই ছুরি দিয়ে মাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করছে। আমি দৌঁড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমাকেও তিনি ছুরি দিয়ে আঘাত করেন।এতে আমিও গুরুতর আহত হই।

ঘাতক জহিরের পিতা আঃ খালেক বলেন, আমি নিরুপায় অসহায়। আমার পুত্র জহির অবাধ্য, সে আমাকে ও আমার ছোট পুত্রকে কয়েক মাস পুর্বে কুপিয় রক্তাক্ত জখম করেছে। পালিয়ে বেড়ানোর কারনে তাকে আইনের আওতায় আনতে পারিনি। একজন পিতা হিসেবে আমি ব্যর্থ। এ ঘটনায় কুলাঙ্গার পুত্র জহিরের ফাঁসি দাবি করেন তিনি।

গুরুতর আহত কোহিনুরের সাথে যাওয়া দেবর শরীফের সাথে মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি শংকিত কন্ঠে বলেন কোহিনুরের অবস্থা আশংকাজনক। এখনও রক্ত ক্ষরণ চলছে। আমাদের ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। যেকোনো মূহুর্তে খারাপ খবর আসতে পারে।

এলাকাবাসী জানান,জহির দীর্ঘদিন যাবত বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করছে। পারিবারিক ভাবে কোনো বাধা না থাকায় সে তার ইচ্ছে মত যার তার সাথে এমন ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। এমন বেপরোয়া হওয়ার পিছনে তার অন্যান্য ভাইদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তাদের ইন্ধনেই আজ জহির এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

আরিফের স্ত্রী কোহিনুরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বাড়িওয়ালা ও এলাকার লোকজন শংকা প্রকাশ করেন। তারা ঘাতক জহিরকে গ্রেফতার করে বিচারের মাধ্যমে কঠোর স্বাস্তির দাবি জানান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহতদের পরিবার এ ব্যাপারে মামলার দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

স্টাফ করেসপন্ডেট
১৯ এপ্রিল,২০১৯

Share