Home / চাঁদপুর / প্রথমবারের মতো পর্যটক নিয়ে কলকাতা থেকে ‘আরভি বেঙ্গল গঙ্গা’ চাঁদপুরে
rv-bengal-ganga-chandpur

প্রথমবারের মতো পর্যটক নিয়ে কলকাতা থেকে ‘আরভি বেঙ্গল গঙ্গা’ চাঁদপুরে

কলকাতা থেকে প্রথম পর্যটকবাহী জাহাজ আরভি বেঙ্গল গঙ্গা চাঁদপুরে এসে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে জাহাজটি চাঁদপুর ঘাটে এসে পৌঁছায়।

দীর্ঘ ৭০ বছর পর নৌপথে কলকাতা-ঢাকা যাত্রীবাহী ক্রুজ পরিষেবা চালু হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় কলকাতা থেকে গত শুক্রবার ঢাকার উদ্দেশে ১৯ যাত্রী নিয়ে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করে প্রমোদতরী ‘আরভি বেঙ্গল গঙ্গা’। যা বৃহস্পতিবার চাঁদপুর শহরের পুরনো লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করে রাখা হয়।

এর মধ্যে লন্ডন, আমেরিকা, অস্ট্রোলিয়া, ব্রিটিশ, ও ইতালির ৬ জন পর্যটকসহ বিদেশি সাংবাদিকরাও রয়েছেন।

এদিকে জাহাজটি চাঁদপুর এসে পৌঁছালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তারা পর্যটকদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা দিপাক বরা, পর্যটকবাহী জাহাজ আরভি বেঙ্গল গঙ্গার চেয়ারম্যান রাজ সিং, সাবেক আইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান নতুন গুহ বিশ্বাস, পর্যটকবাহী জাহাজ আরভি বেঙ্গল গঙ্গার লজিস্ট্রিক ম্যানেজার মো. নুরুজ্জামান, বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক ইউনিয়ন সিবিএ সদস্য সচিব মো. আকতার হোসেন, যুগ্ম সচিব মো. শাহজালাল, যুগ্ম সদস্য সচিব মো. আকতারুজ্জামান ও রাশেদ।

এদিকে প্রমোদতরী পর্যটকবাহী জাহাজ আরভি বেঙ্গল গঙ্গা শুক্রবার সকাল থেকে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করবেন এবং ওইদিন বেলা ১২ টা পর্যন্ত ঘুরে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

আরভি বেঙ্গল গঙ্গা লজিস্টিক ম্যানেজার মো. নুরুজ্জামান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ১৯ জন পর্যটক ও ৩০ জন ক্রু নিয়ে কলকাতার খিদিরপুর থেকে রওনা হয় জাহাজটি। এরপর ভারতের সুন্দরবনের কোলঘেঁষে, বাংলাদেশে মোংলা হয়ে জাহাজ প্রথমে কাউখালীতে নোঙর করা হয়। রাত হয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার জন্য সেখানে অবস্থান নিয়ে সকালে পুনরায় রওনা দেয়া হয়। বরিশালে নোঙর শেষে এবং বৃহস্পতিবার ৬টায় এসে নোঙর করা হয়।

আজ (৪ এপ্রিল) চাঁদপুর শহর ঘুরে নারায়ণগঞ্জের পথে যাত্রা শুর করা হবে। এরপর ৮ এপ্রিল পুনরায় কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওনা দেবে জাহাজ আরভি বেঙ্গল গঙ্গা।

বিদেশি পর্যটক মি. আন্দ্রিয়া বলেন, প্রমোদতরীতে বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে পেরে আমরা বেশ উচ্ছাসিত হয়েছি। এটা খুবই ভালো এবং রোমাঞ্চকর একটি যাত্রা। আমাদের খুব ভালো লাগছে দীর্ঘ বছর পর দুই দেশের মধ্যে শুরু হওয়া নৌ-পথের প্রথম যাত্রার যাত্রী হতে পেরে। ইমিগ্রেশন প্রসেসসহ সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি ও সুন্দরভাবে হয়েছে।

অপর পর্যটক নমরিতা বানসাল বলেন, এই যাত্রাটা একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের নদী আর নদীর তীরের সৌন্দর্য্য, মাছ ধরার দৃশ্য সত্যিই খুব মুগ্ধ করছে। আমরা একই সঙ্গে এদেশের বিভিন্ন স্থানের দর্শনীয় স্থানগুলোও দেখার সুযোগ পাচ্ছি। এভাবে নৌপথে দু’দেশের মধ্যে ভ্রমণ ব্যবস্থা চালু থাকলে ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্পে উভয় দেশই এগিয়ে যাবে। পর্যটন শিল্পে এ খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতের ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটির সাবেক চেয়ারম্যান নতুনগুহ বিশ্বাস চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এটা খুবই সুন্দর ও আরামদায়ক যাত্রা। আশা রাখি কলকাতা-ঢাকা নৌ-রুটে খুব দ্রুত যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। বেঙ্গল গঙ্গার ভেতরে যাত্রীদের অবস্থানের জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা।

বেঙ্গল গঙ্গার সত্ত্বাধিকারী রাজ সিং চাঁদপুর টাইমসকে জানান, নদীপথে ভারত-বাংলাদেশের এই যাত্রীসেবা ও ভ্রমণে পর্যটন শিল্প নিয়ে খুব ভালো ভবিষ্যৎ রয়েছে। আমরা দু’দেশের মধ্যে চলাচলের জন্য নতুন জাহাজ বানানোর কাজ করছি। আমরা চাই কলকাতা থেকে বাংলাদেশে প্রতিদিন সেবা দিতে। নারী যাত্রীদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে এবং সে লক্ষ্যে কাজও করছি।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের পাগলা থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের ক্রুজ ‘এমভি মধুমতি’। বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জলপথে পণ্য পরিবহন হলেও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর দুই দেশের মধ্যে জলপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো ।

প্রতিবেদক- শরীফুল ইসলাম
৪ এপ্রিল, ২০১৯