চাঁদপুর

চাঁদপুরে আবারো ধরা পড়েছে ভয়ংকর বিষধর ‘রাসেল ভাইপার’

এর এক ছোবলেই মৃত্যু নিশ্চিত। কারণ রাসেল ভাইপারে কামড়েছে অথচ বেঁচে গেছেন এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে। আবার কেউ ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও এই সাপের বিষ ‘হেমোটক্সিন’ হওয়ায় মাংস পঁচেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয় ।

চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন এলাকার মোল হেডের নদীর পাড়ে কচুরিপানার ওপর থেকে ধরা হয়েছে প্রায় ৩ ফুট লম্বা ভয়ংকর বিষধর ও বিরল প্রজাতির রাসেল ভাইপার সাপ, বাংলায় যাকে বলা হয় চন্দ্রাবোড়া।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর ) দুপুরে সাপটিকে চাঁদপুরের বন বিভাগ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সাপটিকে ধরেছেন চাঁদপুর শহরের নিউ ট্রাক রোড এলাকার গাজী বাড়ীর মৃত শহীদ উল্লাহ গাজীর ছেলে শামীম গাজী ওরফে সামু।

এর আগে গত ১৯ আগস্ট দুপুরে চাঁদপুরে শহরের কোড়ালিয়া এলাকায় মেঘনা নদীর পাশে একটি পুকুর থেকে সবুজ নামের এক যুবক এ ধরনের আরেকটি সাপকে উদ্ধার করে।
পরে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রতিনিধিদের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

সামুর দাবি, গত বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে স্বাপ্নর মাধ্যমে দেখতে পান, এ জাতীয় একটি সাপ তার শরীরের সাথে জড়িয়ে আছে পরে তিনি সাপটি তাকে বলছে আমাকে বাচাঁও এসময় সাপটি হাতে ধরে তিনি ভয় পান এবং চিৎকার দিয়ে উঠেন ।

পরের দিন ১৯ সেপ্টেম্বব বৃহস্পতিবার শহরের বড় ষ্টেশন এলাকায় কেউ একজন রাসেল ভাইপার সাপ দেখে পেয়ে চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন এসে ভিড় জমায়। ওইসময় শামীম গাজী ওরফে সামু বড় ষ্টেশন এলাকায় মাছ কেনার জন্য গেলে বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তিনি সাপটিকে ধরে তিনি কৌশলে ধরে বাড়িতে এনে খাঁচায় আটকে রাখেন। এলাকাবাসীও সাপটিকে দেখতে তার বাড়িতে ভীড় করেন।

গবেষক দলের প্রধান মোহাম্মদ নোমান জানান, চন্দ্রবোড়া সাপটি অনেক বিষধর। এটি ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কয়েকটিদেশে আছে। বাংলাদেশের উত্তরঞ্চলের কিছু জেলায় এবং দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় রাসেল ভাইপার সাপটির অস্তিত্বমিললেও চাঁদপুরে এটি ২য়।

রাসেল ভাইপার একটি দুর্লভ সাপ। দেশের রাজশাহী, নাটর, নওগা, দিনাজপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর জেলায় এই ধরনের সাপ দেখতে পাওয়া গেলেও চাঁদপুরে এটি দেখা যাওয়ার কথা নয়। হয়তো বন্যার পানির সাথে ভেসে সাপটি এখানে এসে থাকতে পারে। হয়তো এটি কোন কারনে ফিরে যায় নেই।

তিনি আরো বলেন, রাসেল ভাইপারের কামড়ে বাংলাদেশে প্রথম ১৯৯৫ সালে এক সাওতাল মহিলা মারা যায়। তখনো বুঝা যায়নি কোন সাপে তাকে কামড়েছে। কিন্তু ২০১৩ সালে রাজশাহীতে ১৮ বছর বয়সী একটি ছেলে মারা গেলে এই সাপের অস্তিত্বের কথা প্রথম জানতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যায় তার মধ্যে রাসেল ভাইপারের কামড়েই অধিকাংশ মানুষ মারা যায়

তিনি বলেন, “এটি কামড় বসালে এর বিষ খুব দ্রুত মানব দেহের রক্তে ছড়িয়ে পড়ে, হৃদপিন্ড অল্প সময়ে অকার্যকরহয়ে পড়ে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্তএই সাপটির কামড়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।”

চাঁদপুরের প্রশাসন পক্ষে থেকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা জানান, আমার ধারণা উত্তরাঞ্চলের পানি মেঘনা হয়ে নেমে আসার সময় সাপগুলো স্রোতে চাঁদপুরে চলে আসতে পারে। পরে সাপটি ফিরে যায় নি। আমরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রতিনিধিদের হাতে সাপটি তুলে দিয়েছি। তারা সেখানে গবেষণার কাজে লাগাবেন। সাপটি অনেক বিষধর। এই ধরনের বিষধর সাপ দেখতে পেলে বিশেষজ্ঞদের জানাতে এবং সাধারণ মানুষকে সাপের কাছে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

চাঁদপুর সামাজিক বনায়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন,আমরা ‘সাপের খবর পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রতিনিধিদের খবর দিলে তারা চাঁদপুরে আসেন। তাদের কাছে সাপটি হস্তান্তর করা হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হবে। তারা সেখানে গবেষণার কাজে লাগাবেন।’

আগের ঘটনাটির প্রতিবেদন-

প্রতিবেদক : আনোয়ারুল হক, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Share