দায়িত্ব পালনে জনবান্ধব এবং জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠা একজন পুলিশ সুপারকে বিদায় জানাতে হচ্ছে চাঁদপুর বাসীর। তিনি হলেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ) জিহাদুল কবির পিপিএম ও বিপিএম।
তিনি চাঁদপুরে ২০তম পুলিশ সুপার। জনাব জিহাদুল কবির ২০১৮ সালে ১২ আগস্ট পাবনা জেলা থেকে বদলী হয়ে চাঁদপুর জেলা পুলিশ হিসেবে যোগদান করেন। মাত্র এক বছর ৬ দিনের মাথায় গত ১৮ আগস্ট ২০১৯ তারিখে তিনি অ্যাডিশনাল ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন এবং ঢাকা রেঞ্জে বদলীর আদেশ হয় ।
চাঁদপুরে খুব অল্প সময়ই পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন। এই সল্প সময়ে তার কাজের মাধ্যমে চাঁদপুরের মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। একজন জনবান্ধব, বিনয়ী ও কর্মদক্ষ পুলিশ সুপার হিসেবে চাঁদপুরের সর্বমহলে পরিচিত পেয়েছেন। তিনি চাঁদপুরসহ ৪ জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার বিরল সুযোগ পেয়েছেন। যতটুকু জানা গেছে, প্রতিটি জেলায় পুলিশ সুপার পদে দায়িত্বপালনকালীন তিনি তার কাজের সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
জিহাদুল কবির, বিপিএম, পিপিএম খুব অল্পদিনেই মাদক বিরোধী ভূমিকা ও জনবান্ধব মূলক কর্মকা- করায় সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে চলতি বছরে ১শ’৩ টাকায় (একজন) ১শ’ ১৫ জন কনস্টেবল পদে চাকুরী দিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে করে মানুষের আস্থাও বেড়েছে আরো অনেক।
সাধারণ মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হন। এছাড়া মাদক, বাল্যবিবাহ, ছেলে ধরা গুজব, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা করে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। তার নেতৃত্বে মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানে সুফল হিসেবে চাঁদপুর মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় একটি বিশাল সংখ্যক মাদক সেবী ও ব্যবসায়ী স্বেচ্ছায় আত্মসমার্পণ করে।
সর্বশেষ চাঁদপুর কমিউনিটি পুলিশ ও চাঁদপুর পৌরসভার সহযোগিতায় নিরাপত্তার স্বার্থে চাঁদপুর পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পেক্ষিতে পুরো চাঁদপুর শহরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছেন।
যা ছিলো তার কাজের আরেকটি বড় সাফল্য। চাঁদপুর পুলিশ সুপার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মানুষের যে কোন অভিযোগ ফেসবুক কিংবা ম্যাসেঞ্জারে জানার সাথে সাথে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন ।
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মাদকসহ সকল ধরনের অপরাধ নির্মূলে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন কোন মাদকবিক্রেতা বা অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নে আন্তরিক হয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপুলিশ পরিদর্শক ড. মো: জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম,পিপিএম বার। সেই আলোকে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির,বিপিএম, পিপিএম, মাদকের সাথে কোন আপোষ নাই মর্মে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কাজ করেছিলেন এবং জিরো ট্রলারেন্স ঘোঘণা করেছেন ।
চাঁদপুরকে সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। চাঁদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলার থানাগুলোতে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি গত (২৯ জানুয়ারি) সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পেয়েছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) জিহাদুল কবির পিপিএম।
পরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠাকিতার মাধ্যমে বিপিএম পদক গ্রহণ করেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) জিহাদুল কবির, বিপিএম, পিপিএম। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) জিহাদুল কবির, বিপিএম, পিপিএম রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদকে মনোনীত হওয়ায় পুরো চাঁদপুর জেলার সূধীজন তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
জানা গেছে গত ২০১৮ সালে নিজেদের পেশায় অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর ২০১৯ পুলিশের ৪০জন সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ৬২ জনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক দেয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির এর পূর্বে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) সেবা পেয়েছেন।
পদক পাওয়ার বিষয়ে অনুভুতি জানতে চাইলে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির জানান, পেশাগত কাজের স্বীকৃতি পেয়েছি। অবশ্যই ভাল লাগছে। এ অর্জনের কারণে আমার দায়িত্বটা আরো বেড়ে গেলো।
তিনি জানান, আমি চাঁদপুর ছাড়াও পূর্বের কর্মস্থল পাবনায় উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ দিয়েছি পদক প্রস্তাবনার জন্য কাগজপত্রে। এছাড়াও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে দুলাভাই ও শ্যালিকা মিলে আপন বোনকে হত্যা, কয়েক যুগ পরে হারিয়ে যাওয়া কন্যাকে পিতার নিকট ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা, ফরিদগঞ্জে ৭ জঙ্গি আটকসহ আরো কিছু কাজ উল্লেখ্যযোগ্য।
বিশেষ করে ২০১৮ সালের সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাঁদপুরে শান্তি ও শৃঙ্খলার মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া, নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত সকল কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করেছি, গত দু’টি ঈদেও কোন প্রকার বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমার পেশাগত কাজের অনেক কাজেই উল্লেখ্য করা হয়েছে। তবে আমার ধারণা সুষ্ঠুভাবে চাঁদপুরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছি এ বিষয়টি হতে পারে।
এদিকে চাঁদপুর সদর উপজেলাসহ জেলার ৭টি উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও মাদক নির্মূলের জন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে ও সার্কেলদের নেতৃত্বে থানা পুলিশের নানামূখি পদক্ষেপ চলমান ছিলো। গত ১ মাসের তথ্যেও ভিত্তিতে জানাযায় প্রায় প্রতিদিন মাদক নির্মূলের জন্য জনসচেতনতা সভা সেমিনার করা হয়েছে। মাদক বিক্রেতা ও সেবীদের আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে।
ওপেন হাউজ ডে এখন থানা ভবন থেকে মহল্লা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাদক নির্মূলে পুলিশ সুপর জিহাদুল কবির বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের এ ধরনের নতুনত্ব উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ ও সচেতন নাগরিক। চাঁদপুর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির, বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে চাঁদপুর মডেল থানা নিরলশ শ্রম দিয়ে মাদক, জঙ্গিবাদ,ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ মুক্তকরণসহ সকল ধরনের অপরাধ নির্মুলে নির্ঘূম অভিযান পরিচালনা করে হচ্ছে।
গত আগস্ট মাসের তথ্যর আলোকে দেখা যায়, চাঁদপুর মডেল থানার বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
যার মধ্যে চাঁদপুর থেকে চুরি হওয়া স্বর্ণ ও রুপা, চোরচক্র আটকসহ চুরি হওয়া মোবাইল, মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো: নাসিম উদ্দিন জানান, জেলা পুলিশ সুপারের সার্বিক তত্বাবধানে মাদক, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ মুক্তকরণসহ সকল ধরনের অপরাধ নির্মূলে সোচ্চার ভুমিকা পালন করছে সদর মডেল থানা পুলিশ।
জনবান্ধব হিসেবে চাঁদপুরকে মাদকসহ সকল অপরাধ নির্মূল করে একটি শান্তিপ্রিয় জেলা হিসেবে জেলা পুলিশ সুপার স্যারের সার্বিক তদারকিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান স্যার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সর্কেল জাহিদ পারভেজ চৌধুরী স্যার নিত্য নতুন কৌশল প্রয়োগ করে সফলতা অর্জন করছেন। জানাযায়, পুলিশ সুপারের নির্দেশে মাদক সেবী চিরতরে মাদক ছেড়ে দিয়ে আলোর পথে আসার তাগিদে সদর মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করেছে। একই সাথে গত মাসে মাদক সংক্রন্ত মামলায় অর্ধশতাধিক আসামীকে আইনের আওতায় এনে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য।
অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ৩০টির অধিক। সদর মডেল থানার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারন মানুষ। এ বিষয়ে পাড়া মহল্লা বেশ কয়েকজন সচেতন মানুষ জানান, চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ গত কয়েকমাস যাবত মাদক নির্মূলে যে চিরুনী অভিযান পরিচালনা করছে তা অব্যাহত থাকলে সমাজের যুব সমাজ রক্ষা পাবে। চাঁদপুর হবে মাদকমুক্ত শান্তির জেলা।
প্রসঙ্গত, গত ১২ আগস্ট ২০১৮ বিদায়ী পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম এর হাত থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির মহোদয়।
সবাইকে আবেগাপ্লুত করে বিদায় নিয়ে চাঁদপুর আসলেন পাবনার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) জিহাদুল কবীর, বিপিএম, পিপিএম। বদলি সূত্রে পাবনা থেকে চাঁদপুরে যাওয়ার প্রাক্কালে ১০ আগস্ট জেলা পুলিশের সদস্যরা প্রথা অনুযায়ী রশির সাহায্যে ফুলসজ্জিত গাড়ি টেনে তাঁকে বিদায় জানান।
এ সময় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি। জিহাদুল কবীর ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর পাবনার এসপি হিসেবে যোগ দেন। প্রথমে মাগুরা, পরে রাজবাড়ীর এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
চতুর্থ জেলা হিসেবে চাঁদপুরের এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য পাবনা ত্যাগ করেন তিনি। মাগুরার এসপি থাকাকালে তিনি পিপিএম পদক পান। ওইসময় পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির জানা যায়, তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ২০ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন।
পুলিশ বিভাগে চাকুরিকালিন তিনি ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মাগুরা, ২০১৫ থেকে ২০১৬ রাজবাড়ি ও ২০১৬ থেকে বর্তমানে পাবনা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। চাঁদপুর থাকাকালীন তিনি বিপিএম ও সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি, ন্যাস্ত হয়েছেন ঢাকা রেঞ্জে। কর্মজীবনে পুলিশ সুপার হিসেবে চাঁদপুর তাঁর ৪র্থতম জেলা ছিলো।
বাগেরহাট জেলার কৃতি সন্তান জিহাদুল কবির ব্যক্তি জীবনে এক কন্যা ও ছেলে সন্তনের জনক। তাঁর সহধর্মিণী সাদিয়া কবির ইডেন মহিলা কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন। বর্তমানে গৃহীণী।
পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির, বিপিএম, পিপিএম (সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) এর সফলতার গল্প :
বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক, মা গৃহিণী। সংসারের পরিধিটাও ছিল ব্যাপক। নয় ভাই-বোনের বড় সংসার একা টেনে নিয়েছিলেন বাবা। সবাইকে করেছেন শিক্ষিত। পরিবারের সবাই গ্রাজুয়েশন ডিগ্রিধারী।
তিনি ছিলেন সবার ছোট। লেখাপড়ায় বেশ মেধাবী। ২০তম বিসিএসে একবারই অংশগ্রহণ করে বাজিমাত করেছেন। প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম বারই সুযোগ হয়ে যায় বাংলাদেশ পুলিশে। কর্মজীবনেও সফল তিনি। এতক্ষণ যার কথা বললাম তিনি এসপি জিহাদুল কবির।
জীবনের শুরু: ১৯৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার কাজাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জিহাদুল কবির। বাবা আহম্মদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মা আয়েশা গৃহিণী। ছয় বোন-তিন ভাইয়ের সংসারে জিহাদুল সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই বাবার আদর্শকে বুকে লালন করে পথ চলেন। পড়াশোনা তাকে বেশ আকৃষ্ট করতো। তাই সব কিছুর উপরে পড়াশোনাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। খুব ডানপিটে স্বভাবের না হলেও ক্রিকেটের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল তার। পাড়ার মাঠগুলো চষে বেড়াতেন।
শিক্ষায় ঝোঁক: পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত। যেহেতু তিনি ছোট, তাই মনে সব সময়ই চিন্তা থাকতো তাকেও উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে হবে। ১৯৯০ সালে কাড়াপাড়া শরৎচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯২ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করেন। ১৯৯৭ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ইন ফরেস্টি বিভাগে বিএসসি পাস করেন।
প্রকৌশলীর স্বপ্ন: ছোটবেলা থেকেই জিহাদুল কবিরের ধ্যান-জ্ঞান ছিল একজন প্রকৌশলী হওয়া। কিন্তু বড় হয়ে ইচ্ছে বদলে মনযোগ দেন বিসিএস পরীক্ষায়। টানা দু’বছর ঢাকায় চার বন্ধুসহ বাসা ভাড়া নিয়ে দিন-রাত পড়তে থাকেন। অবশেষে প্রকৌশলীর বদলে হয়ে গেলেন বিসিএস কর্মকর্তা।
বিসিএসের গল্প: পড়াশোনায় তিনি এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে, একটা সময় সফলতা তাকে ধরা দিয়েছে। ২০তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে প্রথম বারই সফল হয়ে গেলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
কর্মজীবন: বিসিএসের আগে তিনি একটি সরকারি চাকরি করতেন। এসিএফ কক্সবাজারে। সেখানে দু’বছর কাজ করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় টিকে গেলে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন পুলিশের এএসপি হিসেবে। প্রথম পোস্টিং হয় গৌরনদী সার্কেল (এএসপি) হিসেবে। এরপর সীতাকু-, ঢাকা মেট্রো, এসি ডিবি, এসি এমটি, এডিসি ট্রান্সপোর্টে কর্মরত ছিলেন। এরপরই আসে মিশনের পালা। ২০০৬ সালে এক বছরের জন্য চলে যান আইভরি কোস্ট। সেখান থেকে ফিরে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। এরপর আবার ঢাকা মেট্রোর এডিসি হিসেবে যোগ দেন।
সেখান থেকে আবার মিশনে চলে যান লাইবেরিয়া। সেখানে থেকে ফিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ঝিনাইদহ জেলায় নিযুক্ত হন। ২০১২ সালে প্রথম পুলিশ সুপার হিসেবে মাগুরা জেলায় নিযুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি রাজবাড়ী, পাবনা হয়ে বর্তমানে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
সফলতা : বিসিএস পরীক্ষায় টিকে যাওয়াই তার বড় সফলতা। এছাড়া কর্মজীবনে মানুষের ভালোবাসাকেও সাফল্য হিসেবে দেখছেন। কর্মজীবনে সফলতার মধ্যে পাবনায় চরমপন্থীদের উৎখাত করা। তিনি সেখানে যোগ দেওয়ার পর চরমপন্থীদের শীর্ষ নেতারা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তিনি এ পর্যন্ত ৪টি জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে জনগণকে সেবা দিয়ে এসেছেন।
স্বীকৃতি: ২০০৭ সালে ‘ইউএন মেডেল ফর দ্য সার্ভিস ফর পিস ইন আইভরি কোস্ট’ লাভ করেন। এছাড়া ২০১০ সালে একই পুরস্কার লাইবেরিয়াতেও পান। ২০০৯ ও ২০১১ সালে আইজিপি ব্যাজ, ২০১৪ সালে পিপিএম পদক লাভ করেন।
তিনি যা বলেন: জিহাদুল কবির বলেন, ‘আপনি যদি কাউকে সম্মান করেন, তাহলে আপনি সম্মান পাবেন। সম্মান না করে সম্মান পাওয়ার আশা করাটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়।’ তিনি বিশ্বাস করেন, যেখানে তিনি গিয়েছেন, মানুষের সাথে ভালো আচরণ করেছেন। বিনিময়ে তিনি যেমন ভালোবাসা পেয়েছেন, তেমনি সাধারণকেও ভালোবাসা দিয়েছেন।
লেখক পরিচিতি- সোহেল রুশদী,
প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক চাঁদপুর খবর
প্রেসক্লাব রোড, চাঁদপুর ।