জাতীয়

প্রাথমিকে ১৬ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে নিয়মিত পাঠদান

ভবনের পলেস্তরা ও বিম ভেঙে শিক্ষার্থীর প্রাণহানির পরও রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬ হাজার ১০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছে শিশুশিক্ষার্থীরা। যেকোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে জেনেও পাঠদান করছেন শিক্ষকরা।

এছাড়া, অস্বস্তিকর পরিবেশে আরও ৩৯ হাজার ৬১৪টি জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস করতে বাধ্য করা হচ্ছে শিশুদের। তবে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, অতি-ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পুরো পরিস্থিতির উত্তরণে প্রাথমিক ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (পিডিপি-৪) আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) মাধ্যমে নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলছে।

এই বছরের ৬ এপ্রিল ক্লাস চলার সময় বরগুনার আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবনের পলেস্তরা ও বিম ভেঙে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। এই ঘটনার পর জরুরিভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ভবনের আপডেট তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস না নেওয়ার নির্দেশনাও জারি করা হয়।

মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ১ লাখ ৫ হাজার ৯৮১টি। এর মধ্যে ব্যবহার উপযোগী ভালো ভবন রয়েছে ৪১ হাজার ১৫১টি, নির্মাণাধীন ভবন ১ হাজার ৭৮২টি, জরাজীর্ণ ৩৯ হাজার ৬১৪টি, ঝুঁকিপূর্ণ ও জরুরি মেরামতযোগ্য ভবন ১৬ হাজার ১০৬টি এবং পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে সাত হাজার ৩২৮টি।

রাজধানীতে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন মোট ৫৩৭টি। এসব ভবনের মধ্যে ব্যবহার-উপযোগী ভালো বিদ্যালয় ভবন রয়েছে ১৯০টি, নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে ২০টি, জরাজীর্ণ ভবন ২৪৬টি, ঝুঁকিপূর্ণ ও জরুরি মেরামতযোগ্য ভবন ৬৬টি এবং পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে ১৫টি।

রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ও জরুরি মেরামতযোগ্য ভবন ৬৬টি। ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অধিক জরাজীর্ণ ভবন ১২টি। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ৭৮টি। এসব বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। এলজিইডির মাধ্যমে ভবনগুলোতে মাঝে-মধ্যে রঙ লাগিয়ে ক্লাস পরিচালনার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থা রাতারাতি করার মতো ব্যবস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের না থাকায় শিক্ষকরাও বাধ্য হচ্ছেন ক্লাস নিতে।

ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে। এই বিদ্যালয়ের তিনটি ভবনের মধ্যে পুরনো ১ নম্বর ভবনটি অধিক জরাজীর্ণ। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘স্কুলের মোট শিক্ষার্থী ৭০১ জন। ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনের দু’টি রুমে একশ ছাত্র-ছাত্রীর ক্লাস নিতে হয়। এছাড়া জরাজীর্ণ আরেকটি ভবনেও ক্লাস নিতে হচ্ছে। রঙ লাগিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি। ভবন দু’টি ভেঙে নতুন ভবন করার কথা শুনছি। কবে হবে জানি না।’

রাজধানীর জাফরাবাদ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, একটি চারতলা ও একটি তিন তলা ভবনে ক্লাস চালু রয়েছে। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী এক হাজার ৬১৬ জন। প্রথম শ্রেণি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু রয়েছে এই বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘তিনতলা ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন করা হবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন মেরামত ও দৃষ্টিনন্দন করার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজধানীর উত্তরায় তিনটি ও পূর্বাচলের ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে স্থাপন করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠান হবে দৃষ্টিনন্দন। রাজধানীর ৩৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৫টি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুই হাজার ৯৭৫টি কক্ষ নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া, ১৭৭টি বিদ্যালয়ের এক হাজার ১৭৭টি কক্ষও দৃষ্টিনন্দন করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা, শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানো এবং দুই লাখ শিশুর জন্য শিশুবান্ধব শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ তৈরি করা, বৈষম্য দূর করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বিদ্যালয়) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিডিপি)-৩-এর আওতায় অনেক ভবন মেরামত করা হয়েছে। আর পিডিপি-৪-এর আওতায় বিদ্যালয় ভবন মেরামত ও নির্মাণ কাজ চলছে। জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ভবনের মেরামত ও নতুন ভবন নির্মাণের মধ্যদিয়ে সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। তবে, এই কাজ করতে সময় লাগবে আগামী চার বছর।’

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন—যেমন আজই মেরামত করতে হবে, তেমন ভবনগুলো মেরামত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মেরামত কাজ চলছে। এলজিইডিরি সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করা হয়েছে।’ তারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও তিনি জানান।

বার্তা কক্ষ
২২ জুন ২০১৯

Share