অর্থনীতি

চাঁদপুরে আড়াই লাখ প্রবাসী থেকে ১৭৯২ কোটি টাকা র‌্যামিটেন্স অর্জন

চাঁদপুরের সোনালী, অগ্রণী, জনতা, কৃষি ও ইসলামী ব্যাংকের ৮৭ টি শাখায় নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ১৭৯২ কোটি ৩২ লাখ টাকার বৈদেশিক র‌্যামিটেন্স অর্জন হয়েছে।

চাঁদপুরের জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয় সূত্র মতে, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাঁদপুরের বৈধ ২ লাখ ৫০ হাজার শ্রমজীবী নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে তাদের নিকটতম স্বজনদের কাছে ব্যাংক ও অন্যান্য এজেন্সির মাধ্যমে র‌্যামিটেন্স প্রেরণ করেন।

অবৈধ বা বিকাশ বা অন্যান্যভাবে রয়েছে আরো অসংখ্য, যার কোনো পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয়নি।

চাঁদপুরের প্রবাসীদের শ্রমের বিনিময়ে পাঠানো র‌্যামিটেন্স জেলার প্রায় দু’শতাধিক ব্যাংক শাখা ও ক শ’ শপিংমলে অর্থের তারল্য সৃষ্টি করছে। জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিক্ষা, কৃষি,স্ব-স্ব এলাকায় অবকাঠামোর উন্নয়ন,মসজিদ,মাদ্রাসা ও এতিমখানার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ক্ষেত্রের চিত্র পাল্টে দিয়েছে প্রবাসীদের বৈদেশিক র‌্যামিটেন্স ।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো.আব্দুল সবুল মন্ডল মঙ্গলবার (১ অক্টোবর ’১৬) জাতীয় যুব দিবসের এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৯৪ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রবাসীর বেলায় দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে চাঁদপুরের অবস্থান এখন চতুর্থ।’ বর্তমানে এর সংখ্যা এক কোটিরও বেশি ।

নদীমাতৃক চাঁদপুরের জন্য এটি একটি বিশাল প্রাপ্তি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চাঁদপুরের প্রবাসীদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশগুলোতে শ্রম ব্যয় করছেন।

এছাড়া মালয়েশিয়া, ইতালি, ফ্রান্সসহ, সিংগাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাঁদপুরের প্রবাসী কর্মজীবী রয়েছে। তাঁরাই এসব র‌্যামিটেন্স পাঠাচ্ছেন।

চাঁদপুরের সোনালী, অগ্রণী, জনতা, কৃষি ও ইসলামী ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো সূত্রে জানা যায়, সোনালী ব্যাংকের ২০ টি শাখা চলতি বছরের জানুয়ারি হতে নভেম্বর পর্যন্ত ১২৯ কোটি টাকা। পৃথক হিসেবে জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২৮ টি শাখা জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ ৪ মাসে ১৫ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংকের ১৭ টি শাখায় জানুয়ারি হতে নভেম্বর পর্যন্ত ২৮৩ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের ২০ টি শাখা ৫৩৩ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের ৫ টি শাখায় ৮৩২ কোটি টাকা বৈদেশিক র‌্যামিটেন্স অর্জন করেছে ।

চাঁদপুরের প্রবাসীরা প্রতি মাসে এ সব র‌্যামিটেন্স বিভিন্ন অর্থলগ্নী আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে এসব র‌্যামিটেন্স প্রেরণ করে থাকে।

কোনো কোনো ব্যাংক কেবলমাত্র গোপন একটি পিন নাম্বারের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করছেন। অনেক প্রবাসী গ্রাহক তাদের ব্যক্তিগত হিসাবেও অর্থ প্রেরণ করেন।

চাঁদপুর জেলার অভিভাবক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোজাদ্দেদুর রহমান বলেন,‘ প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক র‌্যামিটেন্সে দেশের রিজার্ভ বাড়ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে।’

জনতা ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আলী আহমেদ খান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘জনতা ব্যাংকের প্রতিটি বৈদেশিক র‌্যামিটেন্স ডেস্ক ও হেলপ ডেস্ক আলাদাভাবে সেবা প্রদানের জন্যে খোলা হয়েছে। ব্যাংক শাখা এ ক্ষেত্রে সব্বোর্চ সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর ।’

ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘ প্রবাসীরা টাকা প্রেরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাংক তার গ্রাহককে কাংখিত অংকের টাকা প্রদান করতে সক্ষম। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত বিভিন্ন অর্থলগ্নি এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রবাসীরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে ওই অর্থ প্রেরণ করেন।’

চাঁদপুরের উত্তরা, রূপালী, ফার্মাস, মার্কেন্টাইল, প্রাইম, ডাচ-বাংলা, সিটি, ন্যাশানাল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, ট্রাস্ট প্রভৃতি ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ লেনদেন করলেও চাঁদপুরে এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগীয় অফিস কুমিল্লা থাকায় এবং বিকাশ লেন-দেন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় এ প্রতিবেদনে তা’উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি বলে চাঁদপুর টাইমসের এ প্রতিবেদনে যুক্ত হয়নি।

চাঁদপুর অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার গীতা মজুমদার প্রবাসীদের সম্পর্কে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, প্রবাসীরাই হচ্ছেন সোনার ছেলে। তাদের পাঠানো র‌্যামিটেন্স দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিচ্ছে।

প্রতিবেদক : আবদুল গনি
৫ ডিসেম্বর,২০১৮ বুধবার

Share