জাতীয়

র‌্যাংগসের মতোই ভাঙা হবে বিজিএমইএ ভবন : দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশংকা

বহুল আলোচিত র‌্যাংগস ভবনের মতো সনাতন পদ্ধতিতেই হাতিরঝিলের ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক। জানা গেছে, আধুনিক নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতির বদলে প্রচলিত সনাতন পদ্ধতি বেছে নেওয়া হচ্ছে।

এতে বিজিএমইএর খরচ ১৩ কোটি থেকে কমে দাঁড়াবে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফলে ভবন ভাঙতে গিয়েও লাভবান হচ্ছে বিজিএমইএ। এক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ ও প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক এই ভবন ভাঙার খরচ দেবে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিজিএমইএ।

জানা গেছে, সনাতন পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার ঝুঁকি অনেক। ২০০৮ সালে অপরিকল্পিতভাবে তেজগাঁও বিজয় সরণিতে র‌্যাংগস ভবন ভাঙতে গিয়ে ১১ শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা দেখেছে বাংলাদেশ। সে সময়ে প্রতিদিন দেড়শ শ্রমিক কাজ করে ছয় মাসে ১০ তলা র‌্যাংগস ভবন ভাঙা হয়।

কিন্তু ১৬ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে প্রতিদিন ৫০ শ্রমিক কাজ করবেন। রাজউক সূত্র জানায়, নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকের সাহায্যে যদি এই ভবন ভাঙতে হয়, তাহলে খরচ হবে কমপক্ষে ১৩ কোটি টাকা। আবার সর্বাধুনিক বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে (কন্ট্রোলড ডিমোলিশন) ভাঙা হলে ভবনের রড, বাথরুম ফিটিংসসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী কাজে লাগানো যাবে না। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রচলিত সনাতন পদ্ধতিতে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার দিকে এগোচ্ছে রাজউক।

এ প্রসঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ গতকাল বলেন, ‘বিজিএমইএ ভবন ভাঙা কাজের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজউক। কোন প্রক্রিয়াতে ভবনটি ভাঙা হবে, সেটি ঠিক করা হয়নি। তবে আদালত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙতে পারব বলে আশা করছি। সর্বশেষ আজও (গতকাল) বিজিএমইএ ভবন ভাঙা নিয়ে বৈঠক করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই সিরিয়াস।’

ভবন ভাঙা প্রসঙ্গে হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস গত ১২ এপ্রিল বলেছিলেন, কন্ট্রোলড ডিমোলিশন বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতি ব্যবহার করেই বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তা ও চীনা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ডিনামাইট দিয়েই ভবনটি ভাঙা হবে।

স্থপতি ইকবাল হাবিব গতকাল বলেন, আমরা রাজউকের প্রস্তুতিতে দুর্বলতা দেখছি। আধুনিক কন্ট্রোলড ডিমোলিশন বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতিতে বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার কথা। কিন্তু এখন রাজউক ম্যানুয়াল (হাত দিয়ে) পদ্ধতিতে ভবন ভাঙবে। অথচ সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে বিজিএমএ ভবনটি দ্রুত ভাঙা যেত। কিন্তু র‌্যাংগস ভবনের মতো করেই বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হলে সামনের বর্ষায় জনদুর্ভোগ বাড়বে। আশা করছি, বিজিএমইএর খরচ কমানোকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে রাজউক জনদুর্ভোগ ডেকে আনবে না।

এর আগে গত ১২ এপ্রিল রাজউকের কাছে নিজেদের বিতর্কিত ভবনটি বুঝিয়ে দিয়ে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন নিজস্ব নতুন ভবনে কার্যালয় খুলেছে বিজিএমইএ। প্রসঙ্গত, আট বছর মামলা লড়ে পরাজিত হয়ে এবং কয়েক দফা সময় নিয়ে শেষ পর্যন্ত এ ভবন রাজউককে হস্তান্তর করে বিজিএমইএ। জমির স্বত্ব না থাকা এবং জলাধার আইন লঙ্ঘন করায় হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাই কোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। আপিল বিভাগ ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙার জন্য বিজিএমইএকে নির্দেশ দেয়।

পাশাপাশি এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি।

সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না। ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে হাতিরঝিলের এ জায়গাটি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় কেনে। নির্মাণ শেষে ২০০৬ সালে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।

বার্তা কক্ষ
১০ জুন ২০১৯

Share