প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তন করে বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে সরকার। সহকারী শিক্ষক পাবেন ১২তম গ্রেডে বেতন, আর প্রধান শিক্ষক পাবেন দশম গ্রেডে। শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
এ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত বিধিমালা রোববার রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেছেন। শিগগিরই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষকদের বেতনের ধাপ সংশোধন করতে গিয়ে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বেতন ধাপও সংশোধন করা হচ্ছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বেতনের ধাপ নবম থেকে সপ্তম গ্রেডে উন্নীত করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশোধিত বিধিমালায় বিদ্যালয়ে ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক’ নামে নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পদ সৃষ্টি হলে প্রায় ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। বিধিমালার গেজেট প্রকাশের পরপরই এ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদে আরও ১৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আসছে।
১৭ হাজার শিক্ষকের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ হাজার ও অন্য স্তরে সহকারী শিক্ষক পদে ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হলে আগামী সপ্তাহে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে।
ডিপিই সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতে ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিতে গত বছরের জুনে ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮’ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়।
তখন ২৪ লাখের বেশি প্রার্থী আবেদন করে। আবেদনকারী বেশি হওয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে বিপাকে পড়ে মন্ত্রণালয়। এরপরও আগামী ১৫ মার্চ থেকে ধাপে ধাপে লিখিত পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু আগামী ১৩ মার্চ ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯’ শুরু হচ্ছে। ওই আয়োজনের ব্যস্ততার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে ১৩ মার্চের পর মন্ত্রণালয়ে সভা করে লিখিত পরীক্ষার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তন : বর্তমানে প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর হলেও তারা বেতন পান ১১তম গ্রেডে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্য সব চাকরিজীবী দশম গ্রেডে বেতন পান। এমনকি ৩৪তম বিসিএস থেকে যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয় তখন সবাই দশম গ্রেড পেলেও শুধু সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পেয়েছেন ১১তম গ্রেড। ফলে প্রধান শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন দশম গ্রেডে বেতনের দাবিতে আন্দোলন করেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পান ১৪তম গ্রেডে।
ফলে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের বেতনের পার্থক্য তিন ধাপ। এটি মেনে নিতে রাজি নন সহকারী শিক্ষকরা। তারা প্রধান শিক্ষকের এক ধাপ নিচে বেতন চান। এ নিয়ে একাধিকবার আন্দোলনও করেছেন সহকারী শিক্ষকরা।
শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেলের এই পরিবর্তনে প্রধান শিক্ষকরা খুশি হলেও সহকারী শিক্ষকরা খুশি নন। তারা সহকারী প্রধান শিক্ষকের নতুন পদটি চান না। তারা মনে করছেন, এ পদ সৃষ্টি হলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে সহকারী শিক্ষকদের দুটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি না থাকলে এক ধাপ পদোন্নতি পেলেই প্রধান শিক্ষক হওয়া যাবে। তারা প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপেই বেতন চান।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, আমাদের দাবি প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেড। কিন্তু সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি হলে আমরা যখন ওই পদে পদোন্নতি পাব, তখন এমনিতেই আমরা ওই পদের স্কেলে বেতন পাব। তাহলে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য থেকেই যাবে। তাই আমরা এ মুহূর্তে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ চাই না। আমরা প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেডে বেতন চাই। (যুগান্তর)
৬ মার্চ,২০১৯