বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সবচাইতে যেটা বেশি প্রয়োজন সেটা হলো বিদ্যুৎ। আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আর বিদ্যুতের উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালাবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
তিনি বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চাঁদপুরে ২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ৬টি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত নতুন ৯টি গ্রিড উপকেন্দ্র বিশেষায়িত বিদ্যুতায়ন এবং ১২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন যত হচ্ছে, মানুষের মাথাপিছু আয় তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন চাহিদার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। সেই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। চাঁদপুর ছাড়া সিরাজগঞ্জ, ভোলা, চট্টগ্রামের সনদ্বীপ, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও রাজবাড়ীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চাঁদপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সকালে বিদ্যুৎ বিভাগের আয়োজনে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শওকত ওসমান, বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম ইকবাল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৫৭ মেগাওয়াট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো ১২ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেয়া হয়। একইসঙ্গে এদিন সাবমেরিন কেবলে সনদ্বীপে বিদ্যুতায়নের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট সিম্পল সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (সিসিপিপি) ও সিরাজগঞ্জে ২৮২ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট উদ্বোধন করা হলো। গ্যাসচালিত এ দুই কেন্দ্রের প্রথমটি নির্মাণ করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
দ্বিতীয় কেন্দ্রটি রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিপিজিসিএল) সঙ্গে যৌথভাবে স্থাপন করছে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি সেম্বকর্প।
বেসরকারি উদ্যোক্তাদের তেলচালিত চারটি কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ওরিয়ন পাওয়ারের খুলনার রূপসায় ১০০ মেগাওয়াট, দেশ এনার্জির চাঁদপুরে ২০০ মেগাওয়াট, মিডল্যান্ড পাওয়ারের আশুগঞ্জে ১৫০ মেগাওয়াট এবং একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের চট্টগ্রামের জুলদায় ১০০ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট।
প্রধানমন্ত্রী নতুন যে ১২ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেন সেগুলো হলো- ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু, ঠাকুরগাঁও সদর ও বালিয়াডাঙ্গী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও কালুখালী, বরগুনার বামনা, হবিগঞ্জের খালাই, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমেরীগঞ্জ ও বাহুবল এবং জামালপুরের মেলান্দহ ও ইসলামপুর।
এর আগে সরকার ১৮৬টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করার ঘোষণা করেন। দেশে প্রথম সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে দ্বীপ উপজেলা সনদ্বীপের বিদ্যুৎ সংযোগ শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর। বুধবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী একই দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে নির্মাণ করা ১২টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
১৩২/৩৩ কিলোভোল্ট লেভেলের এ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ ও বরিশাল উত্তর, চট্টগ্রামের বারৈয়ারহাট, নীলফামারীর জলঢাকা ও সুনামগঞ্জ, সিলেটের বিয়ানীবাজার, রাঙামাটি এবং কক্সবাজারের মাতারবাড়ি। এছাড়া চট্টগ্রামের ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্রও একই সময়ে উদ্বোধন করা হয়।
প্রতিবেদক- শরীফুল ইসলাম