সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতনস্কেল দশম গ্রেডসহ গেজেটেড পদমর্যাদা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে প্রাথমিকের ৬৫ হাজার ৫৯ জন প্রধান শিক্ষকের ভাগ্য ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন আইনজীবীরা।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় ধরনের প্রধান শিক্ষকদের জন্য ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে এ আদেশ কার্যকর করার জন্য বলা হয়েছে।এ সংক্রান্ত এক রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ (সোমবার) হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নিয়ে নানা বৈষম্য রয়েছে। এসব নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। অনেক শিক্ষক যে পদে যোগদান করে থাকেন, সেই পদে থেকেই অবসরে চলে যান। এ সব বিষয় বিবেচনা করে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যোগদানের পর সহকারী শিক্ষকদের ১২ গ্রেড ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ১১ গ্রেড, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ১০তম গ্রেড দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিক সম্মতির পর আমরা শিক্ষকদের বেতন স্কেলে পরিবর্তনের বিষয়ে কাজ শুরু করেছি।’
এ অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘প্রতিটি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টির কাজ চলছে। এতে সহকারী শিক্ষকরা দ্রুত এ পদে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন। আর প্রধান শিক্ষকরা যেহেতু দ্বিতীয় শ্রেণির, তাই তাদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর একধাপ নিচে থাকবেন সহকারী প্রধান শিক্ষকরা, আর পরের ধাপেই থাকবেন সহকারী শিক্ষকরা। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টির জন্য নিয়োগ বিধিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।’
বর্তমানে প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হলেও তারা বেতন পান ১১তম গ্রেডে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির অন্য সব চাকরিজীবী দশম গ্রেডে বেতন পান। এমনকি ৩৪তম বিসিএস থেকে যখন দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয় তখন সবাই দশম গ্রেড পেলেও শুধু সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পেয়েছেন ১১তম গ্রেড। ফলে প্রধান শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন দশম গ্রেডে বেতনের দাবিতে আন্দোলন করে।
বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পান ১৪তম গ্রেডে। ফলে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের বেতনের পার্থক্য তিন ধাপ। কোনোভাবেই সেটি মেনে নিতে রাজি নন সহকারী শিক্ষকরা। তারা প্রধান শিক্ষকের এক ধাপ নিচে বেতন চান। এ নিয়ে একাধিকবার আন্দোলনও করেছেন সহকারী শিক্ষকরা।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেলের এ পরিবর্তনের কাজে প্রধান শিক্ষকরা খুশি হলেও সহকারী শিক্ষকরা খুশি নন। তারা সহকারী প্রধান শিক্ষকের নতুন পদটি চান না। তারা মনে করছেন, এ পদ সৃষ্টি হলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে সহকারী শিক্ষকদের দুটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি না থাকলে এক ধাপ পদোন্নতি পেলেই প্রধান শিক্ষক হওয়া যাবে। তারা প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপেই বেতন চান।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘আমাদের দাবি প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেড। কিন্তু সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি হলে আমরা যখন ওই পদে পদোন্নতি পাব, তখন এমনিতেই আমরা ওই পদের স্কেলে বেতন পাব। তাহলে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য থেকেই যাবে। তাই আমরা এ মুহূর্তে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ চাই না। আমরা প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেডে বেতন চাই।’