চাঁদপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত শিক্ষকদের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় নিয়ে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলার ১ হাজার ১শ’ ৪৭টি বিদ্যালয়ের জন্য স্লিপ বরাদ্ধ হয় ৬ কোটি ৭৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা বিবেচনা করে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
এই বরাদ্ধ থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কাগজ-কলমে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের হাজিরা মেশিন ক্রয় করা হয়েছে- মর্মে ইতোমধ্যে ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ মেশিন ক্রয় করতে ১০-১৫ হাজার টাকার খরচ হলেও সিন্ডিকেট চক্র এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের যোগসাজশে ২০-২৫ হাজার টাকার ভাউচার ধরিয়ে দিয়েছে স্কুল প্রধানদের হাতে।
হাজিরা মেশিন ক্রয় সংক্রান্ত যেই ভাউচার ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে তাতে কোন কোন বিদ্যালয়ে বিশ হাজার, আবার কোন কোনটিতে বাইশ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত জেলার কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাজিরা মেশিন লাগানো হয়নি।
জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জরুরী সভায় সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাঁদপুর জেলার এক হাজার একশ সাতচল্লিশ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় এর উদ্যোগ নেয়া হয়। জুন মাসের মধ্যে এসব বিদ্যালয়ের জন্য হাজিরা মেশিন ক্রয় সম্পন্ন করার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা ক্রয় করতে ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ব্যর্থতা ঢাকতে হাজিরা মেশিন ক্রয় এর বিষয়টি অধিক টাকা খরচ দেখিয়ে কাগজে-কলমে সেরে রাখেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁদপুর সদর উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে তাদের নিকট থেকে হাজিরা মেশিনের জন্য ভাউচার নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত হাজিরা মেশিন বিদ্যালয়গুলোতে আসেনি। কবে আসবে তাও তারা সঠিক জানেন না।
প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে হাজিরা মেশিন ক্রয় করার কথা থাকলেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তা না করে, মেশিন ক্রয় সংক্রান্ত ব্যয় আগেই কাগজ-কলমে দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে পছন্দসই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রয় করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন এখনো ক্রয় না করার বিষয়টি স্বীকার করে চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো সাহাব উদ্দিন বলেন, ভাউচারের মাধ্যমে কেনাকাটা সমন্বয় করা শুধু এ দপ্তরেই হয় না, অন্যান্য দপ্তরেও হয়ে থাকে। ইতমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আশাকরি সহসায়ই হাজিরা মেশিন ক্রয় করা হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যরা মিলে তাদের পছন্দমত স্থান থেকে মানসম্মত হাজিরা মেশিন ক্রয় করতে পারবে। কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ক্রয় করা লাগবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। নিয়ম মেনে যেন মেশিন ক্রয় করা হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।-ফোকাসমোহনা
বার্তা কক্ষ
৬ জুলাই ২০১৯