পর্যায়ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপনের কাজ। নিয়ম অনুযায়ী এসব মিটার ভবন মালিকদের হলেও মিটারের যাবতীয় ফি দিতে হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের। মিটার বিতরণকারী সংস্থাগুলোর কাছেও অভিযোগ জানিয়ে সমাধান পাচ্ছেন না ভাড়াটিয়ারা।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় রয়েছেন। এদের মধ্যে বিদ্যুতের গ্রাহক আছেন প্রায় সোয়া তিন কোটি। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ শহর ও গ্রামাঞ্চলের সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
সেই লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব মিটার স্থাপন ও পরিচালনের কাজ করে যাচ্ছে। এগুলো হলো- ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি-ডেসকো, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-ডিপিডিসি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-আরইবি বা পল্লী বিদ্যুৎ, পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড-পিডিবি, পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি-ওজোপাডিকো এবং নর্দার্ন ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি-নেসকো। প্রত্যেকেই স্বাধীন যার যার কাজে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখের বেশি গ্রাহকের স্থাপনায় প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে।
প্রতিটি প্রিপেইড মিটারের জন্য মাসে মিটার রেন্ট বা মিটার ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা এবং তিন স্তরের মিটারের জন্য ২৫০ টাকা গুনতে হয় একজন গ্রাহককে। একইসেঙ্গে ৫০ টাকা দিতে হয় ডিমান্ড ফি হিসেবে। অন্যদিকে মাসে একবার এই ফি পরিশোধের নিয়ম থাকলেও প্রতিবার মিটার রিচার্জের সঙ্গে সঙ্গেই ৯০ টাকা বা ৩১০ টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ গ্রাহকের।
খাতা-কলমের নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, বাসাবাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনায় থাকা এসব মিটারের ফি স্থাপনার মালিকদের পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ ভবনমালিকই এসব ফি ও ভাড়ার বোঝা চাপিয়েছেন ভাড়াটিয়াদের ওপর।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় বিপাকে পড়ছেন ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়ারা। উপরন্তু বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো সমাধান দিতে পারছে না পল্লী বিদ্যুৎ, ডেসকো বা ডিপিডিসি।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা আফরিনা আক্তার প্রিপেইড মিটার নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, আমরা ভাড়াটিয়া তবুও মিটারের মাসিক চার্জ আমাদের থেকে নেন ফ্ল্যাট মালিক। আমরা এই চার্জ কেন দেবো? আমরা তো মিটারের মালিক না। যেদিন এই বাসা ছেড়ে দেবো সেদিন তো এই মিটার নিয়ে যাবো না। মিটার তো বাড়ির মালিকেরই থেকে যাবে। আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবো ততটুকুর বিল দেবো শুধু।
প্বার্শবর্তী ডেসকোর অফিসেও এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ জানিয়ে কোনো সমাধান পাননি আফরিনা আক্তার।
উপরন্তু প্রতি মাসে যতবারই রিচার্জ করেন ততবারই মিটার ফি ৪০ টাকা এবং ডিমান্ড চার্জ ৫০ টাকাসহ মোট ৯০ টাকা কেটে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ আরেক গ্রাহক আমিনউদ্দীনের। তিনি বলেন, মাসে একবার এই ফি কাটার কথা। কিন্তু যতবারই মিটার রিচার্জ করি ততবারই ৯০ টাকা কাটে। কতদিন পর্যন্ত এই ফি দিতে হবে সেটাই বুঝতেছি না এখন।
মিটারের ফি নিয়ে ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান বলেন, আমাদের জন্য তো আসলে ভাড়াটিয়া বলে কিছু নেই। আমরা মিটারগুলো মালিকদের (ভবন বা ফ্ল্যাট) দিয়েছি। এগুলোর দাম নিয়েও কোনো লুকোচুরি নেই।
সরকার নির্ধারিত দাম ও ফি নেওয়া হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, ভবন মালিকদেরই এসব ফি দেওয়ার কথা। আমরা তো ভাড়াটিয়াদের ফি দিতে বলিনি। আর যারা ফি সম্পর্কে জানতে চান তারা আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করলেই তো আমরা বলে দেই। পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে একজন মালিকের একটি মিটারের মূল্য পরিশোধ হয়ে যাবে।
অবশ্য ভাড়াটিয়াদের জন্য আশার এক আশ্বাস দিয়েছেন ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) এ কে এম মহিউদ্দীন। মিটারের ফি নিয়ে সমস্যার বিস্তারিত বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ভাড়াটিয়াদের এই সমস্যার বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। মন্ত্রণালয়েও জানানো হয়েছে। এই ফি প্রত্যাহার করে নেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে এখন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন আছে। মন্ত্রনালয় যদি ফি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আর ফি দিতে হবে না।
চাঁদপুর টাইমসে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত আরো একটি প্রতিবেদন দেখুন–
বার্তা কক্ষ