ছুটি নিয়ে কুয়েত থেকে দেশে আসেন প্রবাসী স্বামী। কুয়েতে থাকা ব্যবসার দায়িত্ব দিয়ে আসেন স্ত্রীর হাতে। প্রথম কয়েক মাস ভালোভাবে স্বামীর ব্যবসা সামলান স্ত্রী। কয়েক মাস যেতেই স্বামীর দুটি দোকান বিক্রি করে কাজের ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যান স্ত্রী রুবিয়া খাতুন।
স্ত্রীর এমন নির্মম পরকীয়ায় নিঃস্ব হন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বাসিন্দা সুজন মিয়া।
স্ত্রী রুবিয়া খাতুন পরকীয়া প্রেমিক নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে সুজন মিয়ার কুয়েতের দুটি দোকান বিক্রি করে তিন কোটি টাকা ও ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন। সুজনের দোকানের কর্মচারী জুয়েল মাহমুদ রানার সঙ্গে পালিয়ে যান রুবিয়া।
জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার বাসিন্দা সুজন মিয়া ছিলেন কুয়েত প্রবাসী। স্ত্রী রুবিয়া খাতুন ও এক সন্তান নিয়ে কুয়েতে ব্যবসা করতেন তিনি। এরই মধ্যে ছুটিতে দেশে আসেন সুজন, জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করে সদস্য (মেম্বার) নির্বাচিত হন সুজন মিয়া। পাশাপাশি জড়ান চলচ্চিত্র প্রযোজনায়। ইতোমধ্যে ‘বাহাদুরি’ এবং ‘ভালোবাসার জ্বালা’ নামে দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন সুজন মিয়া।
কিন্তু সুজন মিয়া প্রযোজিত দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার আগেই নিজের জীবনে ঘটে যায় করুণ ঘটনা। সিনেমাপাড়ায় এসে নিজেই হয়ে গেলেন সিনেমার গল্প। স্বপ্ন ছিল আরও কিছু ছবি প্রযোজনা করবেন, কিন্তু স্ত্রীর প্রতারণায় সব হারিয়ে নিঃস্ব সুজন।
এখানেই শেষ নয়, সুজন মিয়াকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ট্রাকচাপায় একটি পা হারিয়ে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন তিনি।
সুজন মিয়া বলেন,‘আমি কুয়েতে ছিলাম। সেখানে ট্যাক্সি চালাতাম। ২০০৮ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বাড়ৈপাড়া এলাকার আহম্মদ আলীর মেয়ে রুবিয়া খাতুনের সঙ্গে পরিচয় হয়। রুবিয়া খাতুনও কুয়েত ছিল। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেম। পরে ২০১১ সালে কুয়েতে আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের সংসারে রায়না নামে চার বছরের এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
কুয়েতে ট্যাক্সি চালিয়ে একটি খাবার হোটেল এবং একটি মুদি দোকান দেই। এরই মধ্যে ছুটিতে দেশে আসি। দেশে ফিরে ২০১৬ সালে সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করি এবং সদস্য নির্বাচিত হই। জনপ্রতিনিধি হওয়ায় কুয়েতে আর ফিরতে পারিনি। তখন কুয়েতে থাকা স্ত্রী দেখাশোনা করত হোটেল ও মুদি দোকান। দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন পরিশোধসহ নানা আইনি সমস্যা সমাধানের জন্য স্ত্রীকে কুয়েতের বিধি অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেই।
তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি ‘এসএস মাল্টিমিডিয়া’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাই। এখান থেকে শুরু করি চলচ্চিত্র প্রযোজনার কাজ। পরপর নির্মাণ করি দুটি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে একটির নাম ‘বাহাদুরি’ অপরটির নাম ‘ভালোবাসার জ্বালা’। ছবি দুটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে। কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় জীবনের করুণ কাহিনি।
সুজন মিয়া বলেন, রুবিয়া খাতুন আমাকে না জানিয়ে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দেশে আসে। ৭ জানুয়ারি জুয়েল মাহমুদ রানার সঙ্গে পালিয়ে যায়। রানা আমার দোকানের কর্মচারী ছিল। রুবিয়া দেশে আসার বিষয়টি জানতে পেরে শ্বশুরবাড়ি গাজীপুরে ছুটে যাই। কিন্তু বাড়িতে ছিল না রুবিয়া। পরে সেখান থেকে চলে আসি আমি।
তিনি আরও বলেন, রুবিয়ার দেশে আসার খবর কুয়েতে থাকা আমার কর্মচারীদের কাছ থেকে জানতে পারি। কর্মচারীরা জানিয়েছে, কুয়েতের হোটেল ও মুদি দোকান তিন কোটি টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে রুবিয়া। তার কাছে আমার ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রাখা ছিল। তার কোনো খোঁজ না পেয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। এরই মধ্যে ৯ জানুয়ারি আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠায় রুবিয়া।
সুজন মিয়া বলেন, ১৯ জানুয়ারি আমাকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালালে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। তবে একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে আমার। এসব ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেছি। রুবিয়া খাতুনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার এবং আমার মেয়ে রায়না ও অর্থ উদ্ধারে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
রুবিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে সুজন মিয়া বলেন, রুবিয়া খাতুন আগে একটি বিয়ে করেছিল, যা আমাকে জানায়নি। ২০০৪ সালে সোনারগাঁয়ের নয়াপুর হাতুড়িপাড়া এলাকার বাবুল মিয়াকে বিয়ে করেছিল রুবিয়া। অথচ আমাকে বলেছিল অবিবাহিত। ২০১১ সালে আমাকে বিয়ের পরও একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল তার। কয়েকবার আমার হাতে ধরাও পড়েছিল। কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে ক্ষমা করে দিয়েছি।
ভবিষ্যতে এমন করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রুবিয়া। কিন্তু আর সংশোধন হয়নি। যার শেষ পরিণতি ভোগ করছি আমি।
সুজন মিয়া আরও বলেন, ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু হয়নি। রুবিয়া খাতুন এবং তার পরকীয়া প্রেমিক জুয়েল রানা আমাকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও একটি পা হারাই।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া ঘটনায় প্রথমে পঙ্গু হাসপাতাল পরে ল্যাবএইডে চিকিৎসাধীন থাকার পর বর্তমানে ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর সহযোগিতায় পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, গাউসিয়া এলাকায় ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় ২১ জানুয়ারি রূপগঞ্জ থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করি। মামলায় রুবিয়া খাতুন ও পরকীয়া প্রেমিক জুয়েল রানাকে আসামি করা হয়। পাশাপাশি তিন কোটি টাকা এবং ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় করা মামলায় রুবিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরই মধ্যে ২৩ জানুয়ারি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় রুবিয়া খাতুন।
বার্তা কক্ষ
২৪ জানুয়ারি,২০১৯