ধর্ম নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ : পুলিশের গুলিতে ৪ মুসল্লী নিহত

ভোলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির আল্লাহ ও রাসুল (স.)কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে সাধারণ মুসল্লিদের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
২০ অক্টোবর রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া সমাবেশে হঠাৎ পুলিশের সঙ্গে সাধারণ জনতার সংঘর্ষ শুরু হয়।

নিহতরা হলেন- মাহফুজুর রহমান পাটোয়ারী (২৩), মিজান (৩০), মাহবুর রহমান (৩০) ও শাহিন (২৫)। নিহতদের বাড়ি একই এলাকায়। নিহত মাহফুজ বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মিরাজ পাটোয়ারীর ভাই।

এই ঘটনায় পুলিশসহ আহত শতাধিক বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আহত পুলিশকে হাসপাতালে নিলেও সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ঘরে আটকা পড়েছেন। এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেগঞ্জেও। গুরুতর গুলিবিদ্ধ ৮ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিপ্লব চন্দ্রের ফেসবুক আইডি থেকে তার বন্ধু তালিকার বেশ কয়েকজনের কাছে আল্লাহ এবং রাসুল (সঃ) কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালির ম্যাসেজ আসে।

বিপ্লব চন্দ্র শুভ বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চন্দ্র মোহন বৈদ্দের ছেলের আইডি থেকে এই ম্যাসেজ আসাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মুসুল্লিদের ব্যানারে আজ সকাল ১০টায় বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়। সকাল থেকে বোরহানউদ্দিন উপজেলার গ্রামগঞ্জ থেকে মুসুল্লিরা শহর অভিমুখে আসতে থাকে। এতে ভোলার প্রলিশ সুপার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ মোতায়েন করেন। পুলিশ সভা সংক্ষিপ্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়ার পর পরেই সংঘর্ষের শুরু হয়। প্রথমে এক পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুঁড়লে পুলিশের গুলিতে পথচারিসহ বিক্ষোভকারী আহত হন।

অন্যদিকে পুলিশের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে ঘটনাস্থলে সব কার্যক্রম পরিচালিত করছেন। হঠাৎ করে কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তাদের ধাওয়া দেয়া হয়।

এ সময় তারা মসজিদের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেন। সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে তাদের ১০-১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় প্রায় ১২-১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সারও চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অনুমতি ছাড়াই তারা সমাবেশ করতে চেয়েছিল। আমরা তাদের দ্রুত শেষ করতে বলি। কিন্তু তারা কথা না শুনে উল্টো আমাদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছুড়তে বাধ্য হই আমরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে বরিশাল বিভাগীয় ডিআইজি, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার উপজেলার কাচিয়া ২নং ওয়ার্ডের বিপ্লব নামে এক যুবকের ফেসবুক পোস্ট কেন্দ্র করে উপজেলাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার ওই যুবকসহ আরও একজনকে আটক করে পুলিশ।

পুলিশ বিপ্লব চন্দ্র শুভকে থানায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এ ঘটনায় বিপ্লবের ফাঁসির দাবি করে পুরো মুসলিম জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। রোববার তাদের মহাসমাবেশের ডাক দেয়।

যুগান্তরের সৌজন্যে ভিডিও-

মানবজমিনের সৌজন্যে ভিডিও-

Share