চাঁদপুর

বক্সে নিয়মিত পুলিশ : দালাল মুক্ত হচ্ছে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল

অবশেষে দালাল মুক্ত ও বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ হতে চলেছে আড়াই,শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য নির্মিত পুলিশ বক্সে বসছে নিয়মিত পুলিশ সদস্যের টহল।

১২ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সংলগ্ন স্থানে পুলিশ বক্সে চাঁদপুর মডেল থানার এ এস আই ইয়াকুব সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের সেখানে ডিউটি করতে দেখা গেছে। আর এখন থেকে সেখানে প্রতিদিন দুটি সিপটে নিয়মিত পুলিশ পাহাড়া থাকবে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন একজন এস আই অথবা এ এস আই এবং সাথে ৩ জন কনস্টেবল সহ প্রতিদিন সেখানে দুটি সিপটে ৪ জন পুলিশ সদস্য ডিউটি করবে।

জানাযায় গত ৩/৪ বছর পূর্বে চাঁদপুর জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আশরাফুজ্জামান ও কমিউনিটি সার্পোট কমিটির নেতৃবৃন্দরা মিলে হাসপাতালের নিরাপত্তায় রক্ষায় নিয়মিত সেখানে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি থাকার জন্য এই পুলিশ বক্সটি করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপর থেকেই হাসপাতালের নিজস্ব অর্থায়নে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন এই পুলিশ বক্সটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২ বছরেরও অধিক সময় ধরে এতদিন এই পুলিশ বক্সটি পুলিশ বিহিন পড়েছিলো। এতদিন হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য সেখানে চাঁদপুর জেলা পুলিশ থেকে কোন প্রকার নিয়মিত পুলিশ সদস্যদের দিয়ে ডিউটি করার ব্যবস্থা কর হয়নি। এজন্য এই বক্সটি নির্মাণ করার পর থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এতদিন পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছড়াই পুলিশ বক্সটি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এদিকে প্রতিদিনই হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে বহিরগত এবং হাসপাতালের নিকটতম বিভিন্ন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টরের দালালদের উপস্থিতি হয়ে থাকে। ওইসব দালালরা রোগীদের সাথে কথার ছলে সক্ষতা জড়িয়ে তাদের সুবিদা মতো নিজস্ব ডায়াগনস্টিকে নিয়ে যান। এরবিনিময়ে দালালরা একদিকে যেমন রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন অন্যদিকে রোগী দেয়া ডায়াগনস্টিক থেকেও নির্দিষ্ট কমিশন পেয়ে থাকেন। এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারের সামনে প্রতিদিনই রোগীদের কাছ থেকে মোবাইল, গহনা ও নগদ অর্থ চুরির ঘটনার খবর পাওয়া যায়। এছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রায় সময় অনেক রোগীদের সাথে আসা বখাটে কিংবা মাস্তান প্রকৃতির লোকজন কিছু কিছু সামন্য বিষয় নিয়ে হামলা অথবা চিকিৎসকদের সাথে অনেক খারাপ আচরণ করে থাকে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাসপাতালের পুলিশ বক্সটিতে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি দেখে হাসপাতালে নিয়মিত থাকা অনেক দালালদেরকে তেমন একটা দেখা যায়নি। অনেক দালাল পুলিশদের দেখেই আড়ালে চলে যেতে দেখা গেছে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সচেতন মহল মনে করছেন, হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য এখন থেকে প্রতিদিন নিয়মিত পুলিশ পাহাড়া থাকলে এই সরকারি হাসপাতালটি অনেকটাই দালাল মুক্ত হবে।

কিন্তু স্থানীয় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক গুলোতে খবর নিয়ে জানা গেছে বহিরাগত এবং তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের লোকজন ছাড়াও সরকারি হাসপাতালে চাকরিরত কিছু দালাল রয়েছেন। খবর নিয়ে জনাযায়, হাসপাতলের জরুরী বিভাগে ডিউটি করা ব্রাদার, বিভিন্ন ওয়ার্ডের নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং আয়ারাও রোগীদের পরীক্ষার জন্য যার যার পছন্দ মতো প্রাইভেট ডায়াগনস্টিকে নিয়ে যান। এমন কি মোবাইল কলের দালালও রয়েছেন। তারা রোগী পাঠিয়ে মোবাইলে কল তদের কমিশনের কথা বলে রখেন। রোগী দেয়ার বিনিময়ে এসব ভদ্রবেশী দালালরা পান মোটা অংকের কমিশন। পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত পাহাড়ায় বহিরাগত দালাল মুক্ত কিংবা দালাল প্রতিরোধ হলেও হাসপাতালের ভেতরের এসব দালালদের কে নিয়ন্ত্রন করবে এমনটাই প্রশ্ন সচেতন মহলের।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ( আর এম ও ) ডাঃ মোঃ আসিবুল আহসান চৌধুরীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, এতদিন এটি কার্যকর না হওয়ায় পুলিশ বিহিনই পুলিশ বক্সটি পড়েছিলো। এখন জেলা পুলিশ থেকে হাসপাতলের নিরপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যদের দিয়েছেন। এখন থেকে প্রতিদিন চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ এখানে নিয়মিত ডিউটিতে থাকবে। এরফলে আশা করি হাসপাতালে বহিরাগত দালাল অনেকটা মুক্ত হবে। একই সাথে কেউ অপরধমুলক কর্মকান্ড করতে চাইলে সাথে সাথে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারবে। হাসপাতালের দালাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে কর্মরত কেউ যদি এমন কোন কাজে জড়িত থাকে তাহলে আমরা সেটিও যাচাই করে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিবো।

প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি, ১২ মার্চ ২০২০

Share