Home / সারাদেশ / চাঁদপুরসহ ৮ জেলায় ধারাবাহিক মূল্যায়নের পাইলটিং কার্যক্রম শুরু
কার্যক্রম শুরু
প্রতীকী ছবি

চাঁদপুরসহ ৮ জেলায় ধারাবাহিক মূল্যায়নের পাইলটিং কার্যক্রম শুরু

মাধ্যমিক শিক্ষার ষষ্ঠ শ্রেণির দু’টি বিষয়ে (শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং চারু ও কারুকলা) শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নের কার্যকারিতা যাচাই করতে যাচ্ছে সরকার। পাইলটিং কর্মসূচি হিসেবে প্রাথমিকভাবে দেশের ৮ জেলার সরকারি-বেসরকারি নির্বাচিত ৬৪টি হাইস্কুলে আগামি ৩১ আগস্ট থেকে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

প্রতি জেলায় নির্বাচিত ৮টি বিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এরমধ্যে ৪টি বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং অন্য ৪টি বিদ্যালয়ে চারু ও কারুকলা বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পাইলটিং করা হবে। আর প্রতি ৪টি বিদ্যালয় নিয়ে ১টি ক্লাস্টার গঠন করা হবে । প্রতি জেলায় ২টি বিষয়ের জন্য ২টি ক্লাস্টার গঠিত হবে। এ পাইলট প্রোগ্রামের সময়কাল হবে ৩ মাস। এরপর দেশের সব হাইস্কুলে কনটিনিয়াস অ্যাসেসমেন্ট যাচাই করতে এ পদ্ধতি শুরু করা হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর ড.সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন,‘ষষ্ঠ থেকে শরীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ও চারু ও কারুকলা বিষয়গুলোর ধারাবাহিক মূল্যায়ন ঠিক মতো হচ্ছে কি না এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে একটি পাইলটিং প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে।

চাঁদপুরসহ ৮ জেলার নির্বাচিত ৬৪টি হাইস্কুলে এ কার্যক্রম আগামি ৩১ আগস্ট থেকে পাইলটিং হিসেবে শুরু হচ্ছে। পাইলটিং কার্যক্রমের ফলাফল বিবেনায় নিয়ে এরপর আগামি বছর থেকে দেশের মাধ্যমিক স্তরের সব বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম চালু করা হবে।’

পাইলটিং কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে ইতিমধ্যে একটি এশটি ম্যানুয়াল প্রণয়ন করা হয়েছে। পাইলট প্রোগ্রামটি সেসিপের বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে,শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার বোঝা কমানোর জন্য ২০১৭ সালের জেএসসিতে পরীক্ষা থেকে চারু ও কারুকলা, শারীরিক শিক্ষা এবং কর্মমুখী শিক্ষা বাদ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের অষ্টম শ্রেণির সমাপনি পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয় কৃষি ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান। একই সঙ্গে এসএসসি ও সমমানের শারীরিক শিক্ষা,স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা এবারের পরীক্ষা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল।

এসব বিষয়ের পরীক্ষা আর কেন্দ্রিয়ভাবে হচ্ছে না। এ বিষয়গুলোর মান যাচাই করা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে। বিদ্যালয়ের ধারাবাহিক মূল্যায়নের এ নম্বর শিক্ষাবোর্ডে পাঠাতে হবে। পরে এ নম্বর পাবলিক পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে উল্লেখ করা হবে। তবে ধারাবাহিক মূল্যায়নের নম্বর কোনোভাবেই পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফলে (গ্রেড) ভূমিকা রাখবে না। শুধু নম্বরটি উল্লেখ থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা বাদ দেয়ার পর শ্রেণিকক্ষে কনটিনিয়াস এ্যাসেসমেন্টের বিষয়ে যেসব দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল,সেগুলো ঠিক মতো মানা হচ্ছে না। বিষয়গুলো নিয়ে এক ধরনের গুরুত্ব কমে গেছে। যা সার্বিক শিক্ষার মানে বেশ প্রভাব ফেলছে।

এ কারণে মাধ্যমিক শিক্ষার ষষ্ঠ শ্রেণির দু’টি বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের কার্যকারিতা যাচাই করতে পাইলটিং কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। জেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকা,চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ,চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড়,সাতক্ষীরা ও বরিশাল জেলা।

মাউশির এক নথিতে বলা হয়েছে, প্রতি ক্লাস্টারের আওতাভুক্ত বিদ্যালয়ের বিষয় শিক্ষকরা, জেলা/উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সমন্বয়ে আঞ্চলিক পরিবীক্ষণ ও পরিশোধন প্যানেল গঠিত হবে।

নির্বাচিত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতি মাউশির এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পাইলটিং কার্যক্রম মনিটরিং এর সার্বিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসররা, সংশ্লিষ্ট ২টি বিষয়ে (শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং চারু ও কারুকলা) ৮টি বিদ্যালয় নিয়ে গঠিত ২টি ক্লাস্টারের জন্য ২ জন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ,সহকারী পরিদর্শক বা গবেষণা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে এবং এ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছেন কিনা তা মনিটরিং করতে বলা হয়েছে।

প্রতিমাসে অন্তত: একবার ক্লাস্টারে অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক ও শ্রেণি শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করতে হবে। এর বাইরে আওতাধীন নির্বাচিত বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকরা এ পত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী যেন কার্যক্রম পরিচালনা করে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

পাইলটিং এলাকার সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকদের প্রতি দেয়া মাউশির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পাইলটিং কার্যক্রম আগামি ৩১ আগস্ট শুরু হবে এবং আপনার বিদ্যালয়ে যে বিষয়টির ধারবাহিক মূল্যায়ন পাইলটিং করা হবে তার জন্য ২০ বা ২১টি ((শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ের জন্য ২১টি এবং চারু ও কারুকলা বিষয়ে ২০টি) পিরিয়ড বরাদ্দ করতে বলা হয়েছে।

প্রতি পিরিয়ডের জন্য ৫০ মিনিট সময় থাকবে। আর দু’টি শিফট বিশিষ্ট বিদ্যালয় হলে শুধুমাত্র প্রভাতি শাখাতে এ কার্যক্রম চলবে। বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে একটি সেকশন থাকলে সপ্তাহে ৩টি ক্লাস; দু’টি সেকশন থাকলে সপ্তাহে ৬টি ক্লাস বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক নিয়মিত শিক্ষক না থাকলে ওই বিষয়ের খন্ড কালীন বা অতিথি শিক্ষককে দিয়েই এ কার্যক্রম পরিচালনর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়াও এসব বিষয়ের শিক্ষকরা অন্য কোনো ক্লাস নেয়ার কারণে ক্লাসের সংখ্যা বেশি হলে এ পাইলট প্রোগ্রাম চলাকালীন তাদের নিজস্ব বিষয়ের ক্লাস ব্যতীত অন্য বিষয়ের ক্লাস সংখ্যা কমিয়ে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। শ্রেণিশিক্ষকরা ম্যানুয়ালে নির্দেশিত শিখন শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল এবং মূল্যায়ন নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে রেকর্ড সংরক্ষণ করছেন কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবেন।

জানা গেছে,২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী,প্রাথমিক শিক্ষার আওতা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে। বর্তমানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বিদ্যমান রয়েছে। আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিকের আওতায় আনা হলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। তখন প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির আগ পর্যন্ত ক্লাসের বিভিন্ন সার্বজেক্টের পরীক্ষা না নিয়ে শ্রেণিকক্ষে কনটিনিয়াস অ্যাসেসমেন্ট বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হবে।

মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন,‘শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং চারু ও কারুকলা বিষয়ের ওপর গুরুত্ব কমে গেছে। শুধু ইংরেজি,গণিত আর বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোতে ভালো করলে শিক্ষার মান নির্ণয় করা যায় না। শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং চারু ও কারুকলা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভালো দক্ষতা সার্বিক শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এটি নিশ্চিত করতে কয়েকটি জেলায় শ্রেণিকক্ষে এসব বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন পদ্ধতির কার্যকারিতা নিরুপন করতে পাইলটিং কর্মসূচি শুরু করা হবে।’

বার্তা কক্ষ
২৩ আগস্ট ২০১৯
এজি