Home / সারাদেশ / ‘পেঁয়াজ এখন পাগলা ঘোড়া পাগলা পেঁয়াজ খেপেছে’
Piaz india

‘পেঁয়াজ এখন পাগলা ঘোড়া পাগলা পেঁয়াজ খেপেছে’

পেঁয়াজের দামের প্রসঙ্গ তুলতেই একটি ছড়া শুনিয়ে দিলেন পেশায় ব্যাংকার আবদুল মজিদ। বলছিলেন, ‘পেঁয়াজ এখন পাগলা ঘোড়া। আর কী বলব। পাগলা ঘোড়া খেপেছে, চাবুক ছুড়ে মেরেছে।’ তবে তিনি ছড়াটি এখন নতুন করে বলতে চান, ‘পাগলা পেঁয়াজ খেপেছে।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দোকানির সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়াও করছিলেন আবদুল মজিদ। বলেই যাচ্ছিলেন, ‘কী পাইছেন আমরারে। মগের মুলুক পাইছেন। ডেইলি ১০ টাকা করে দাম বাড়াচ্ছেন।’

না খেপে ঠান্ডা মাথায় জবাব দিচ্ছিলেন দোকানি বাদল মিয়া। বলেন, ‘এখানে চেইত্যা লাভ নাই। চেতার জায়গায় গিয়া চেতেন? আমরা বেশি দিয়া কিনি, বেশি দিয়া বিক্রি করি। পাড়ায় গিয়া খুচরা দোকানদাররে জিগান। কত করে বেচে।’

২৯ অক্টোবর কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দর ছিল ১১০–১২০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ১০৫–১১৫ টাকা।

দিলু রোডের মুদিদোকানি আল আমীন স্টোরের জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে দেশি পেঁয়াজের কেজি চান ১৪০ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা জাকির হোসেনের দিকে তেড়ে যান। ‘মিয়া, কালকে কিনলাম ১২০ টাকায়, আজকে ১৪০ টাকা।’

প্রতিদিন আসলে কত করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, আর এ ঊর্ধ্বগতির শেষ কোথায়—এ হিসাব করতে সরকারি বিক্রয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। আর এ মাসে বেড়েছে ৬১ শতাংশ।

খুচরা বাজারে দর যতই উঠুক না কেন, টিসিবির তথ্য বলছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। ঠিক এক মাস পর গতকাল পেঁয়াজের দর হয়েছে কেজি ১০৫ থেকে ১২০ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এবারের পেঁয়াজের সংকট সরবরাহের নয়, দামের। বাজারে পেঁয়াজ আছে, কিন্তু দাম বেশি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, যৌক্তিক হতো যদি ব্যবসায়ীরা ১২ বা ১৫ শতাংশ মুনাফা করতেন। কিন্তু মুনাফা করছেন তাঁরা অনেক বেশি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, পেঁয়াজের দাম নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। ভারত গত ২৯ সেপ্টেম্বর রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর ঋণপত্র (এলসি) খুলে মিয়ানমার থেকে এবং সীমান্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। মিসর ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আসছে।

কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সার্বিকভাবে পেঁয়াজ নিয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই। পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কোনো উদ্যোগও নেই। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে বলেছেন।

এদিকে পেঁয়াজের চড়া দামের মধ্যে শুধু ঢাকায় সামান্য আয়োজন রয়েছে টিসিবির। ৪৫ টাকা কেজি দরে ৩৫টি ট্রাক দিয়ে ১ হাজার কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ডিলাররা। লম্বা লাইনে থেকে দুই কেজি করে পেঁয়াজ নেওয়ার এই সুযোগ নিতে পারছেন মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ। ট্রাকের মাধ্যমে আরও বেশি পেঁয়াজ বিক্রির সক্ষমতা নেই টিসিবির।

বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন মঙ্গলবার রাতে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পেঁয়াজের বেশি দাম রাখছেন। তাঁদের জানা উচিত নতুন পেঁয়াজ এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে বিদেশ থেকে বড় কয়েকটি চালানও আসছে। বেশি দামের আশায় পেঁয়াজ যাঁরা ধরে রাখছেন বা চালাকি করছেন, আমি নিশ্চিত যে তাঁরা ঠকবেন।’ (প্রথম আলো)

বার্তা কক্ষ, ৩০ অক্টোবর ২০১৯