চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের খিলা বাজার। এই বাজারে প্রায় ১০টি ফার্মেসি রয়েছে। কোন হাসপাতাল নেই, কোনো ডাক্তার আসেন না। অথচ ফার্মেসি খুলেই রোগী দেখেন মালিকরা। দেদারছে রোগীর ওপর প্রয়োগ করছেন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। প্রায় এক লাখ জনবসতির এই খিলা বাজার। যেন দেখার কেউ নেই।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,রোগীরা আসছেন, ব্যবস্থাপত্র দিয়েই ওষুধ দিচ্ছেন দোকানিরা। ওই বাজারের ফার্মেসি গুলো হলো জসিম উদ্দিনের তানিয়া মেডিকেল হল, পলাশ চন্দ্র পালের শেফালী ফার্মেসি, বাবুল চন্দ্র দাসের শুভ ফার্মেসি, মনোরঞ্জনের হৃদয় ফার্মেসি, বিধানের অভিজিত মেডিকেল হল, মাহফুজুর রহমানের নাহিদা মেডিকেল হল, আবদুল মান্নানের মা মেডিকেল হল, সাগর চন্দ্রের মুক্তি ফার্মেসি, রেজাউল করিম রাসেলের বিসমিল্লাহ মেডিকেল ও কুদ্দুস মেম্বারের আমিন মেডিকেল হল।
ফার্মেসির নামকরণেই তাদের বড় চমক। মেডিকেল হল দিয়ে কয়েকটি দোকান। সম্প্রতি তারা নামের পূর্বে ডাক্তার শব্দটি মুছে দিয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসাপত্র দেয়া বন্ধ করেননি।
তাদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। এদের একজন বাবুল চন্দ্র দাস। শুভ ফার্মেসিতে নিয়মিত রোগী দেখেন। সে শাহরাস্তি উপজেলার পাথৈর গ্রামের মালি বাড়ীর মৃত কানু লাল দাসের পুত্র।
পারিবারিক ও এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যমতে, এই বাবুল চন্দ্র দাস ১৯৯৬ সালে খিলাবাজার স্কুল এন্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়েন। পরিবারের দেয়া কর্মসংস্থান এই ওষুধের দোকান। এখন তিনি নিয়মিত ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি রোগী দেখেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা আবার ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত রোগী দেখেন।
এসব ভুয়া চিকিৎসকরা নিজেকে ভিডিআরএমপি ও এলএমএফ ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় তুলে ধরছেন। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করে আসছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এখানে কয়েকজন চিকিৎসা দিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসার দায়ে জরিমানার মাশুলও গুণতে হয়েছে।
কথা হয় নাহিদা মেডিকেল হলের মাহফুজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন,‘আমি কোন রোগী দেখি না। আমি শুধু ওষুধ খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করি। নামের আগে ডাক্তার ছিল। এখন মুছে ফেলেছি।’
বিসমিল্লাহ মেডিকেল হলের রেজাউল করিম রাসেলের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদেরটা ফার্মেসী। আমরা রোগি দেখি না।’
অভিজিত মেডিকেল হলের বিধান চন্দ্র। মুঠোফোনে জানতে চাইলে বললেন ‘আমি ডাক্তার। রোগী দেখি।’
সাংবাদিক পরিচয়ের পরে তিনি বললেন,‘আমি পল্লী চিকিৎসক। ফার্মেসি দিলেইতো এখন সবাই ডাক্তার হয়ে যায়। রোগিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তবে আমাদের খিলা বাজারে কোন ডাক্তার আসেন না।’
এ বিষয়ে চাঁদপুর সিভিল সার্জেন (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ডা. একে এম মাহবুবুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘ফার্মেসি দিয়ে রোগী দেখা সর্র্ম্পূণ বেআইনী। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবো। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে।’
প্রতিবেদক- মনিরুজ্জামান বাবলু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ এপ্রিল ২০১৯