১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন শহীদ সিপাহী মোঃ নূরুল হক প্রধান। তিনি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৯নং কড়ইয়া ইউনিয়নের আকানিয়া গ্রামের মৃত: আব্দুস সোবহান প্রধানের ছেলে।
৭ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। স্থানীয় আকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তৎকালীন ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্থান রাইফেলস-এ যোগ দেন তিনি। ঢাকার পিলখানা হতে সাময়িক প্রশিক্ষন সমাপ্তির পর পঞ্চগড়ে অবস্থিত ইপিআর উইং-এ পদায়ন পান। পরবর্তীতে কর্মরত অবস্থায় স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে যোগ দেন তিনি। এক পর্যায়ে যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাক বাহিনীর গুলিতে তিনি মর্মান্তিত ভাবে শহীদ হন। কচুয়ার এই সাহসী সন্তান তাঁর এই অবদানের সৃকিতি স্বরূপ তাঁেক বর্তমান সরকারের মানর্নীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর প্রতীকে ঘোষিত করেন সম্মানান দেন ( যার গেজেট নং- ৫০২)।
শনিবার (১৭ আগস্ট) বীর প্রতীক শহীদ সিপাহী নূরুল হক প্রধানের ভাই মোঃ আব্দুল হক, সফিকুর রহমান ও মোবারক হোসেন সহ এলাকার একাধিক লোকজন জানান, বীর প্রতীক শহীদ সিপাহী নূরুল হক প্রধান সেদিন বিডিআর বাহিনী থেকে দেশের জন্য যুদ্ধে অকালে জীবন দেন। সে সময় তিনি অবিবাহিত থাকায় এবং যুদ্ধে নিহত হওয়ার তিন মাস পর আমরা ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারি।
পরবর্তীতে খোজ নিয়ে জানতে পারি, তাকে দিনাজপুর এলাকায় সমাহিত করা হয় বলে তার ভাই দাবি করেন। আক্ষেপ করে আব্দুল হক প্রধান বলেন, ভাইয়ের মৃত্যুর পর শেষ বারের মতো তাঁর মুখটুকুও দেখতে পাইনি। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সার্বিক সুযোগ সুবিধা দিলেও আমরা কোন ধরনের সুবিধা পাইনি। বিশেষ করে আমার ভাই বীর প্রতীক শহীদ সিপাহী নুরুল হক প্রধান এর মৃত্যুর পর তার নামে সম্মানি ভাতা পেলেও বর্তমানে টানা ১৩ মাস ধরে সম্মানি ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছি। সম্মানি ভাতা, আমার আত্মীয় স্বজনদের চাকুরীর সুবিধা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেতে সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।’
শহীদ সিপাহী নূরুল হক প্রধানের ভাতিজা মো. কবির হোসেন জানান, আমার দুই চাচা মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এদের মধ্যে একচাচা শহীদ সিপাহী মো. নূরুল হক প্রধান, বীর প্রতীকে খেতাব লাভ করেন এবং অপর চাচা মরহুম আব্দুল মমিন প্রধান ১৯৯৯ ইং সনে মারা গেলেও আমরা রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত।’
শহীদ সিপাহী নুরুল হক প্রধানের নামে নিজ গ্রাম আকানিয়া গ্রামের সড়কের নামকরন, গ্রামের মসজিদ মসজিদ সংস্কার করে আধুনিক মসজিদে রূপদান করতে, আকানিয়া নাছিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারটিতে তার নাম করণ ও দু চাচাতো ভাই রাশেদ ও হাসান সহ অন্যান্যদের চাকরি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুদৃষ্টি কামনা করেন ভাতিজা কবির হোসেন।
এ ব্যাপারে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলিমা আফরোজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধাদের নামে প্রতিটি এলাকায় সড়ক নামকরণ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বীর প্রতীক শহীদ সিপাহী নূরুল হক প্রধান এর নামে এলাকায় সড়ক নামকরণ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
প্রতিবেদক-জিসান আহমেদ নান্নু, কচুয়া
১৭ আগস্ট ২০১৯