বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ১১ দফা দাবিতে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা লাগাতার কর্মবিরতি চলছে। এতে করে চাঁদপুর থেকে সব নৌ-রুটে লঞ্চসহ সকল প্রকারর নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটের নৌযানগুলো শহরের পুরাতন লঞ্চঘাটের ডাকাতিয়া নদীতে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে চাঁদপুরের দক্ষিণাঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার যাত্রী। বিশেষ করে ঢাকামুখি লঞ্চ যাত্রীরা চাঁদপুর লঞ্চঘাটে এসে পুনরায় ফিরে যাবার ভোগান্তিতে পড়েতে হয়েছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) চাঁদপুর শহরের মাদ্রাসাঘাটস্থ লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায় অন্যান্য দিনের চিরোচেনা পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঘাটের সবগুলো পল্টুন লঞ্চ শুন্য পরে আছে। জেলার ৮ উপজেলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালি থেকে আসা অনেক যাত্রী লঞ্চঘাটে এসে অপেক্ষা করে ফিরে গেছেন। কেউ কেউ বাসে চড়েই ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা করছে। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পরেছে যাত্রী সাধাররন।
জেলার হাজীগঞ্জ থেকে আসা যাত্রী খতেজা বেগম জানান, পূর্ব থেকে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কথা না জানার কারণে লঞ্চে চড়ে ঢাকা যাবর উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। এখানে এসেই জানতে পারি লঞ্চ চলাচল বন্ধ। তাই কষ্ট করে আবার বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।
একই অভিযোগ এনে পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার আবুল হোসেন বলেন, অনেক পথ পাড়ি দিয়ে চাঁদপুর ঘাটে এসেছি। জরুরী কাজে আজকেই ঢাকা যেতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে বাসে চড়ে ঢাকা যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ভুক্তভোগী কয়েকজন যাত্রী জানায়,আসন্ন ঈদুল আযহা। তাই ব্যবসায়িক কাজে ঢাকা যাওয়া খুবই জরুরি ছিলো। কিন্তু লঞ্চ ঘাটে এসে ঘাট লঞ্চ শূন্য থাকায় চরম ভোগান্তিতে পরেছি। পূর্ব ঘোষনা ছাড়া এ ধরেনর নৌযান ধর্মঘট সাধারন মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।
ঘাটের টিকেট কাউন্টারে অালাপ করে জানা যায়, বুধবার ভোর ৬টা থেকে সিডিউলে থাকা চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে সকল লঞ্চ বন্ধ রয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাত ১২টার পর্যন্ত ওইদিনের সিডিউলে থাকা ৫৩টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর ঘাট ত্যাগ করেছে।
এর আগে ১৫ এপ্রিল নৌ-পথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত নৌশ্রমিকদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন নৌযান কর্মচারীরা।
নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন চাঁদপুর শাখার সভাপতি হারুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক রওশন মাস্টার জানান, গত ১৯ এপ্রিল শ্রমিক, মালিক ও সরকার পক্ষের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে আমদের ১১দফা দাবি পূরণ করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪৫ দিনের মেয়াদ শেষ হলে গত ১৫ জুলাই ডাকা ত্রিপাক্ষিক সভার আয়োজন করা হয়। তবে ওই সভায় মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত হয়নি।
এতে করে গত ২০ জুলাই (শনিবার) নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেয়, দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে সব প্রকার নৌযান শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন। ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ জুলাই দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিট থেকে কর্মবিরতিতে রয়েছেন নৌযান শ্রমিকরা। তবে চাঁদপুরে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে বুধবার সকাল থেকে।
তারা আরো জানান, দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনিদৃষ্ট সময়ের জন্যে কর্মবিরতি চলবে। দাবী মেনে নেয়ার সাথে সাথেই আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিবো।
এদিকে সচেতন মহলের দাবি, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ১১ দফা দাবি আদায়ে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা লাগাতার কর্মবিরতি সাধারণ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি ফেলবে। অচিরেই এর সমাধান না হলে এ ভোগান্তি বিষ ফোরায় রুপান্তরিত হবে বলে অভিমত ভোক্তভোগীদের।
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম, ২৫ জুলাই ২০১৯