জাতীয়

২০১৪ সালের নির্বাচনের অবস্থা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না : সিইসি

আশঙ্কাগুলো অবহেলা করতে পারি না
দুটি জীবন চলে গেলো, কিন্তু কেন গেলো জীবন
ইসিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সমন্বয় সভা
নির্বাচনে আপনাদের দায়িত্ব জনগণের জীবন রক্ষা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের অবস্থা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ওই নির্বাচনে ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। ওই নির্বাচনের অবস্থা আলোকে বুঝে এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতি ও রূপরেখা তৈরি ও কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন, যাতে করে এবার ভয়ঙ্কর অবস্থা, তাণ্ডব না ঘটে।’

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সমন্বয় সভায়’ সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার করণীয় নির্ধারণে সশস্ত্র বাহিনীসহ সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে চলমান বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে উপস্থিত রয়েছেন চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাব, আনসার, গ্রাম পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসার বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কোন বাহিনীর কত সংখ্যক ফোর্স, কতদিনের জন্য নিয়োজিত করা হবে, কবে নামানো হবে, সেটাই নির্ধারণ হবে এ বৈঠকে।

সিইসি বলেন, তখন (২০১৪ সালের নির্বাচনকালে) মাঠে সব বাহিনী ছিল- স্বশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব। বিজিবিও ছিল। তবুও আমরা তখন কী দেখেছি! তখন তাদের উপস্থিতিতে পুলিশ সদস্য, প্রিজাইডিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হয়েছেন। শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। শতশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে।

‘তখন সেটার কী পরিপ্রেক্ষিত ছিল, কেন আমরা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি তা আলোচনা করার প্রয়োজন আজ আমি মনে করছি না। তবে সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না। সেই অবস্থা থেকে কী করে আমাদের উত্তোরণ করা যায়, সে রকম কোনো পায়তারা যেন না হয়, আবার যেন সেই রকম পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয়, ওই অবস্থার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে, সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।’

নূরুল হুদা বলেন, আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা সভায় মিলিত হয়েছি, যখন জাতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের এই মতবিনিময় সভা। আর মাত্র ১৬ দিন পর ৩০ ডিসেম্বর। অত্যন্ত প্রত্যাশিত একটি দিন, জাতীয় নির্বাচনের দিন। ওই নির্বাচনে নতুন সরকার সংসদ গঠন করবে। সে কারণে আজকে আমাদের এই অনুষ্ঠান। আনুষ্ঠানিক বৈঠক আমাদের আজকেই শেষ। এরপর আর কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে না। এর আগে প্রত্যেকটি বাহিনী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবপর্যায়ের সবার সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিভিন্ন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। নির্বাচনী দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে মতবিনিময় করেছি। আমরা আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।

তিনি জানান, নির্বাচনের সামগ্রিক প্রস্তুতি, যেমন ক্রয়যোগ্য মালামাল সংগ্রহ শতকরা ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ব্যালটপেপার, ভোটকেন্দ্র, ভোটারতালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

‘এবারের নির্বাচনে আপনাদের দায়িত্ব জনগণের জীবন রক্ষা, মালামাল রক্ষা, দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত রাখা। আমি প্রত্যাশা করব, পেশাদারি দায়িত্ব পালনে আপনাদের যে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও মানসিকতা তা কাজে লাগাবেন। গত নির্বাচনের মতো যেন এবার তাণ্ড না ঘটে, সেরকম যেন সুযোগ সৃষ্টি না হয়, এখন থেকে সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হবে’,- বলেন সিইসি।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু একেবারেই আশঙ্কাগুলো (নাশকতার, তাণ্ডব) অবহেলা করতে পারি না। এবার প্রতীক বরাদ্দের পরদিনই যে ঘটনা, সে ঘটনা যতো তুচ্ছ কারণেই ঘটুক না কেন, দুটি জীবন চলে গেলো। কিন্তু কেন গেলো জীবন। এখানে-ওখানে ভাঙচুর, প্রতিহত করার ঘটনা। এগুলো কি শুধুই সামান্য রাজনৈতিক কারণ? নাকি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন প্রতিহত করার মতো ভয়াবহতা সৃষ্টির প্রস্তুতি ও পাঁয়তারা চলছে কি না, তা দেখতে হবে। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে।

‘একটা ঘটনা ঘটে যাবার পর দোষ যার ওপরই চাপানোর চেষ্টা করা হোক না কেন আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি যেন না ঘটে, সেজন্য হালকা করে দেখার কিছু নেই। এসব ঘটনায় একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দেবার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দদেরও সতর্ক অবস্থান নেবার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না তাও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ নজরদারি বাড়াতে হবে। নির্বাচন নিয়ে যখন মানুষের মধ্যে স্বর্তঃস্ফূর্ত ভাব ও পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখন কোনো হামলার ঘটনা বিচলিত করার মতো ঘটনাগুলো সামান্য বলে মনে করার মতো কারণ নেই।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হোক তা না চাওয়ার দলের প্রভাবকরাও সক্রিয় থাকতে পারে। তাই সকলের বিশেষ করে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণকে সচেতন থাকা প্রয়োজন। (জাগো নিউজ)

বার্তা কক্ষ
১৩ ডিসেম্বর,২০১৮

Share