আদালতের এজলাসেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন মিসরের প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি। এর আগে মুরসি কারাগারে অকালে মারা যেতে পারেন বলে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলো।
কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে কারাবন্দি রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১৭ জুন) আদালতে মুরসির মৃত্যর পর অনেক্ষণ মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রেখেছে সিসি প্রশাসন। সঠিক সময়ে মুরসির মৃত্যুর খবরও দেয়া হয়নি।
মুরসির আগাম মৃত্যুর জন্য ক্ষমতাসীন সামরিক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিকেও দায়ী করেছিল যুক্তরাজ্যের বিশেষ স্বাধীন বন্দিত্ব পর্যালোচনা প্যানেল ইনডিপেনডেন্ট ডিটেনশান রিভিউ প্যানেল।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ৬৭ বছর বয়সী সাবেক এ প্রেসিডেন্ট জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এর কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
অন্যদিকে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, আদালতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি পাচার মামলার শুনানি চলছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারকের কাছে কথা বলার অনুমতি চাইলে তাকে কথা বলতে অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
এ সময় ২০ মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি। বক্তব্যের মধ্যেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন মুরসি। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি।
এদিকে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
সোমবার মুরসির মৃত্যুর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এরদোগান বলেন, গাড়ি থেকে নামার সময় আমার কাছে মুরসির মৃত্যুর খবর আসে। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের শহীদ ভাইদের জন্য দোয়া করছি, আল্লাহ যেন শহীদদের ওপর রহম করেন।
এরদোগান বলেন, আদালতের এজলাসেই তার মৃত্যু হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আল্লাহর কাছে রহমত কামনা করি।
এরদোয়ান বরেন, আমাদের কাছে মোহাম্মদ মুরসি শহীদ। ইতিহাস সেই (আল ফাত্তাহ সিসি) একনায়ককে ক্ষমা করবে না যে কিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে জেল দিয়েছে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নির্যাতন করেছে এবং তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।’
বলেছেন, শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত মিসরীয়দের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন মুরসি, এ কারণে তিনি মুসলমানদের কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
এরদোগান বলেন, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি তার হাজার হাজার বিপ্লবী সমর্থককে নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে কারাগারে ছিলেন কিন্তু পাশ্চাত্যের কেউ এর প্রতিবাদ করেনি।
তুরস্পের এ প্রধান বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের শহীদ ভাইদের জন্য দোয়া করছি, আল্লাহ যেন শহীদদের ওপর রহম করেন। আদালতের এজলাসেই তার মৃত্যু হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আল্লাহর কাছেই রহমত কামনা করি।
ইস্তানবুলের হ্যালিক সেন্টারে দেয়া এক বক্তৃতায় মিসরের শাসকের সমালোচনা করে মুসলিম বিশ্বের এই নেতা বলেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি জনগণের ভোটে নির্বাচিত মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল, গণতন্ত্রকে পদদলিত এবং ক্ষমতায় এসে ৫০ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন। মুরসি গণতান্ত্রিক উপায়ে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কিন্তু দেশটির সামরিক বাহিনী এ বাস্তবতা মেনে নেয়নি এবং তারা মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার সব ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছিল।’
এরদোগান বলেন, মুরসিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার সব ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তিনি আদালতে গিয়েও তার ওপর জুলুমের প্রতিবাদ করেছেন। মিসরের জনগণ ও নিজের ওপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিবাদী মুরসির এই মৃত্যু জুলুমের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, মিসরের নিপীড়ক শাসক গণতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া নেতাদের জুলুম করে হয়ত সাময়িক বিজয় অর্জন করেছে।কিন্তু তাদের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস মিসরীয়দের মন থেকে মুছে দিতে পারবে না। তুর্কি প্রেসিডেন্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করে বলেন, সিসি ক্ষমতায় আসার পর মিসরীয়দের ফাঁসি দিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়ে নীরব থেকেছে। এমনকি মিসরে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইউরোপীয় দেশগুলো অংশ নিয়েছে যখন সেখানে ফাঁসির ঘটনা ঘটছিল।
এরদোগান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্ককে ফাঁসির আদেশ বাতিলের জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছে কিন্তু মিসরে তারা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এমন সময় অংশ নিয়েছে যখন সে দেশের নাগরিকদেরকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছিল। আর এ থেকে প্রমাণিত হয় ইউরোপ মানবাধিকার বিষয়ে দ্বিমুখী আচরণ করছে।
বার্তা কক্ষ
১৮ জুন ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur