প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি অনুদানে ভবন নির্মাণ হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ তালিকা ধরেই এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত দশ বছরে সারাদেশের ২,৪০০ মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গড়ে প্রতিটি মাদ্রাসায় দু’কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে সরকার। নির্বাচিত আরও ১,৮০০ টি মাদ্রাসায় একাডেমিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সবমিলিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন নতুন ভবন নির্মাণ হবে। এ সময়ে অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে দু’কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে বলে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,‘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিগত দশ বছরে (২০০৯-২০১৮) শিক্ষাখাতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এ সময়ে ১১, ৩০৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ১২,৬৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হবে।
তীব্র সংকটে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ভবন। আর ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে পুরনো জরাজীর্ণ ভবনগুলোয়। সবমিলিয়ে ১০ বছরে সারাদেশে ২৩,৯৭৯টি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) মাধ্যমে। এ সময়ে জরাজীর্ণ আরও সাত হাজার ৬৪১টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সংস্কার করা হয়েছে। নির্মাণ কাজও বেশ গুণগত ও মানসম্মত হয়েছে।
ইইডি’র প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো.হানজালা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইন অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আর ই-টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়ায় গুণগত মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারি হাইস্কুল ও কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যাবিবেচনায় নিয়ে ৬ থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ভবনে বাড়তি সুবিধা হিসেবে লিফট স্থাপন করা হচ্ছে।’
তিনি জানান, বর্তমানে ইইডি’র কাজের যে গতি রয়েছে সেটি বহাল থাকলে প্রতি বছর ১,৫০০ থেকে ২,০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ করা সম্ভব। ২০২১ সালের পর স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় অবকাঠামো নির্মাণের আর কোন কাজ বাকি থাকবে না।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দু’ মেয়াদে দেশে ৫ টি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। সরকারের গত মেয়াদে ৪ টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে।
ঢাকা শহরে ১১টি সরকারি স্কুল ও ৬টি নতুন সরকারি কলেজ স্থাপন এবং খুলনা, বরিশাল ও সিলেট শহরে ৭টি নতুন সরকারি স্কুল স্থাপন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও জেলা পর্যায়ে ৭০ টি স্নাতকোত্তর সরকারি কলেজের একাডেমিক কাম পরীক্ষা কেন্দ্র ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেলসহ ২১৯টি ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে এবং ঢাকা মহানগরীর সন্নিকটবর্তী এলাকায় ১০ টি সরকারি হাইস্কুল নির্মাণ কাজের ভূমি অধিগ্রহণ চলমান রয়েছে।
রাজস্ব বাজেটে জেলা পর্যায়ের ঐতিহ্যবাহী সরকারি ও বেসরকারি ১,৫০০ টি কলেজে হোস্টেল নির্মাণের জন্য একটি পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইইডি’র প্রধান প্রকৌশলী। উন্নয়ন কাজ অধিকতর গতিশীল করতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের যাবতীয় কার্যক্রম ইতোমধ্যে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইতোমধ্যে তিন হাজার নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন এবং ৩,২৫০টি বিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ, অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের চলমান, ২৩টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের প্রাথমিক কার্যক্রম চলমান, ৪টি সার্ভে ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ চলমান এবং ৩৮৯ টি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।
আধুনিক শিক্ষা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুসরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে ভবনের নকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এসব ভবনে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য র্যাম্প এবং পৃথক টয়লেট, টানা বারান্দা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা ও ঘুলঘুলি স্থাপন, ঢালু ছাদ এবং ছাদে লাল টালি স্থাপন,শহর এলাকায় ছয়তলা,সিটি করপোরেশন ব্যতিত অন্যান্য এলাকায় চারতলা ভবন, হাওর, বিল এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় নিচতলা ফাঁকা রেখে পাঁচতলা আশ্রয়কেন্দ্র কাম শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ, কোস্টাল এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, পাহাড়ি এলাকায় ভবন প্রটেকশন ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
বার্তা কক্ষ
৭ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯