চঞ্চলতা আর দূরন্তপনায় মত্ত চার বছরে শিশু মাহির মোশারফ। একমিনিট স্থির থাকার যেন ফুসরত নেই। অথচ শিশু মাহির জানে না তার বাবা পুলিশ সদস্য মোশারফ হোসেন আর ফিরবে কিনা? নারী পুলিশ স্ত্রী শামীমা বেগমও কাঁদছেন।
আহাজারি আর বিলাপ করছেন। স্বামীর মৃতদেহ একবার দেখার সুযোগ পান কিনা সে নিয়েও রয়েছে তার শঙ্কা। গত দু’বছর একসাথে স্বামী-স্ত্রী চাকরি করছেন হাইমচর থানায়।
ছয় বছর আগে মোশারফ তার সহকর্মী পুলিশ সদস্য শামীমা আক্তারকে বিয়ে করে। তাদের মাহির মোশারফ নামে চার বছরে এক পুত্র সন্তান রয়েছে। গত দুই বছর স্বামী স্ত্রী দু জনেই চাঁদপুরের হামইচর থানায় কর্মরত ছিলেন। মোশারফের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার বারবকুন্ড এলাকার মিজিপাড়ায়।
শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) রাতে চাঁদপুরের হামইচরে পুলিশ ও জেলেদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় নিখোঁজ হন পুলিশ সদস্য মোশারফ হোসেন। রাত থেকেই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল কোস্টগার্ড নদীতে তল্লাশী চালালেও এখনো খোঁজ মিলেনি। অবশ্য খোঁজ না মিলা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানায় পুলিশ।
হাইমচর থানা পুলিশ জানায়, রাতে মেঘনার পশ্চিম পাড়ে চরপোড়ালিয়া এলাকায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী আটক করার জন্য ৪ পুলিশ সদস্য, ২ গ্রাম পুলিশ, ১জন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য ও নৌকার মাঝিসহ রওয়ানা করেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধনকারী মেঘনার পাড়ে থাকা সংঘবদ্ধ জেলেরা তাদেরকে আটক করা হবে সন্দেহ করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ৫ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছোড়ে। এ সময় জেলেদের দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে নদীতে পড়ে পুলিশ সদস্য মোশারফ নিখোঁজ হন।
মোশারফের স্ত্রী শামীমা আক্তার জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় অভিযানে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হন তিনি। তারপর রাত ২টার দিকে বাসায় খবর দেয়া হয় মোশারফকে পাওয়া যাচ্ছে না।
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুহসিন আলম জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও পুলিশ সদস্য মোশারফ নিখোঁজ হয়। তারপর ফায়ার সার্ভিস কোস্টগার্ডসহ নদীতে উদ্ধার অভিযান চালালেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোশারফকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
চাঁদপুর ফায়ার স্টেশনের ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর ফরিদ আহমেদ জানান, খবর পেয়ে রাত থেকেই ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত কোথাও পুলিশ সদস্যের হদিস পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, কোথায় নিখোঁজ হয়েছে সে স্থানটিও সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ, নদী ফায়ার সার্ভিস কিংবা কোস্টগার্ড।
প্রতিবেদক- বিএম ইসমাইল
২৭ এপ্রিল ২০১৯