মেঘনপাড়ের কন্যা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবার শিক্ষামন্ত্রী

মেঘনাপাড় চাদপুরের কৃতি সন্তান দেশের প্রথম নারী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টানা ৩ বারের সাংসদ ডা. দীপু মনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।

রোববার (৬ ডিসেম্বর) মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব শফিউল আলম সচিবালয়ে ডা. দীপু মনিসহ ৪৬ জনের নাম ঘোষণা করবেন।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শপথ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টেলিফোন করা হচ্ছে।

এদিকে ডা. দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনিত হয়েছেন এ খবরে চাঁদপুরের ভোটারদের একটি বড় অংশ ও দলীয় নেতাকর্মীরা সোস্যাল মিডিয়াতে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এ জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ চিকিৎসকের আবেদন ও প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাৎক্ষণিক তাঁর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

বিভিন্ন সূত্রে তাঁর সম্পর্কে জানা যায়, ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রথম কাউন্সিল-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এমএ ওয়াদুদের কন্যা।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে তিনি পুনরায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন

তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর বাংলাদেশে প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিয়োগ পান।

তিনি হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলবি পড়েন। এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন।

এছাড়া তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমঝোতা ও দ্বন্দ্ব নিরসন এর ওপর একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী ।

দিপু মনি চাঁদপুর-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়- প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীণ সময়ে তিনি কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রেরিয়াল অ্যাকশন গ্রুপ-এর প্রথম নারী এবং দক্ষিণ এশীয় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করে। এতে করে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে প্রায় চার দশকের সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় চূড়ান্ত ভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে ।

নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে ডা. দীপু মনি চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর-হাইমচর)-এর প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। সামাজিক উন্নয়ন ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তার অনন্য অবদানের জন্য তিনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হন।

গেলো ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ একাদশ সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮শ’ ১২ ভোট পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩শ’ ১১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন।

এর মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ডা. দীপু মনি ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮শ’ ৯৭, হাইমচর উপজেলায় ভোট পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৯১৫ ভোট।

চাঁদপুর সদর উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২শ’ ৫০। ভোট গ্রহণ হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯শ’ ৪৩। হাইমচর উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮১ হাজার ১শ ৫০, ভোট গ্রহণ হয়েছে ৭১ হাজার ৬২৯।

পারিবারিক জীবনে ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট তৌফীক নাওয়াজ এর স্ত্রী। মি. তৌফীক আন্তর্জাতিক একটি ল’ফার্মের প্রধান। তিনি উপমহাদেশের দু’ হাজার বছরের ঐতিহ্য মন্ডিত ধ্রুপদী সঙ্গীতের উৎস হিসেবে পরিচিত ‘আলাপ’ এর একজন শিল্পী। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের রয়েছে দু’সন্তান। পুত্র তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও কন্যা তানি দীপাভলী নাওয়াজ।

প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন
৬ জানুয়ারি, ২০১৯