দেড় বছর ধরে অটো চালিত রিক্সা চালায় মেহরাজ। এবার অষ্টম শ্রেণীতে থাকার কথা। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হবার পর ক্লাস করা আর সম্ভব হয়নি তার। সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে।
বাবা আক্রান্ত হৃদরোগে। দুইবার হৃদরোগে আক্রান্ত হবার পর চিকিৎসকরা অটো চালিত রিক্সা চালাতে নিষেধ করেছেন। তাই চার ভাই আর মা-বাবার ভরণ পোষণের দায়বার এই ১৩ বছর বয়সী মেহরাজের উপর বার্তায়।
মেহরাজও ভালো নেই। চোখে এলার্জির সমস্যা। সাধ্যমতো চক্ষু চিকিৎসকের স্বরণাপন্ন হবার পর চশমা দিয়েছে। এখন কালো চশমা দিয়েই অটো চালিত রিক্সা চালিয়ে সংসার সামলাচ্ছেন। মেহরাজের স্বপ্ন তার চোখটা ভালো হওয়া। তাতে সংসারের জন্য আরো কঠোর পরিশ্রম করতে পারবে।
মেহরাজের চোখের একটা কিছু হয়ে গেলে পুরো সংসারটাই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। কে নিবে মেহরাজের সংসার টেনে নেয়া গ্লানির দায়ভার? মেহরাজের চোখ ভালো করার দায়িত্ব কে নিবে?
মেহরাজ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের দোয়ালিয়া হাজী বাড়ীর মো. মারুফ হোসেনের বড় ছেলে। রোববার(৫ মে) সকালে হাজীগঞ্জ বাজারের স্টেশন রোডে যাত্রী নিয়ে যাবার সময় মেহরাজের সাথে কথা হয়।
মেহরাজ দেড় বছর ধরে দোয়ালিয়া আশেক আলী মার্কেট হতে হাজীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত যাত্রীদের সেবা দিয়ে আসছে। মেহরাজকে দেখলেই সবাই দোষারোপ করবে দেশের প্রচলিত আইনকে। ট্রাফিক পুলিশকেও দোষারোপ করবে।
এতো ছোট ছেলের হাতে একটি যাত্রীবাহী পরিবহন তুলে দেয়া সমোচীন হয়নি। কিন্তু মেহরাজের সাথে যেই কথা বললেন সেই আইন আর ট্রাফিক পুলিশের কথা ভুলে যেতে হবে। মেহরাজের হৃদয়টা যেই স্বপ্ন খুঁড়ে খাচ্ছে, সেই স্বপ্ন এই বয়সী শিশু সামলাচ্ছেন।
সরকারের কাছে কী চাও? জানতে চাইলে মেহরাজ অবলিয়ায় বললো-চোখ ভালো করে দেয়া চাই। মেহরাজের এমন উত্তর শুনে শরীরটা আরো শিউরে উঠে উপস্থিত সবার। সরকারের কাছে আর্থিক সাহায়তা চায় না মেহরাজ। চোখ ভালো থাকলেই কর্ম করে সংসার সামলাতে পারবে- তার এমনটা ভাবনা ।
কথা বলে জানা গেছে,মেহরাজের ছোট আরো চার ভাই আছে। একজন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ে। তৃতীয়জন দ্বিতীয় শ্রেণীতে। বাকী দুজন ছোট। তার বাবা সুস্থ্য থাকলে এলাকায় রংয়ের কাজ করে। নিয়মিত কোন কর্ম করতে পারে না। দৈনিক ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা আয় হয়। ওই টাকা সন্ধ্যায় বাসায় গিয়ে মায়ের কাছে দেয়। কিস্তি তুলে বাবা দুই বছর পূর্বে এই অটো চালিত রিক্সা ক্রয় করেন।
হাজীগঞ্জ বাজারের অটো চালিত রিক্সা স্ট্যান্ডের লাইনম্যান নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন,‘ছেলেটি খুব ভালো। চোখে সমস্যা। তাই চশমা দিয়েছে। বাবা অসুস্থ্য। অটো চালিত রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়। অনেকগুলো কিস্তি আছে। এই ছেলেটার উপর সব নির্ভর করে।’
প্রতিবেদক:মনিরুজ্জামান বাবলু
৫ মে ২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur