Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / মতলবে পাগল ও নেশাখোরদের আস্তানাসহ ওরশে চলছে কোটি টাকার মিশন
langhtar mela
মতলব লেংটার মাজার

মতলবে পাগল ও নেশাখোরদের আস্তানাসহ ওরশে চলছে কোটি টাকার মিশন

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর (বেলতলী) গ্রামে ঐতিহ্যবাহী শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটার মাজারে ৭ দিনব্যাপি ওরশ ও মেলা চলছে। গত রোববার মেলা শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাসক দলের নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে ৭ দিনের এই মেলা আগে-পরে এক মাস স্থায়ী থাকে।

এ মেলা উপলক্ষে মাজার কমিটি ও তাদের আশেপাশের লোকদের কয়েক কোটি টাকার বানিজ্য হয়। এছাড়াও মেলা আশেপাশে পাগল ও নেশাখোররা আস্তানা গেরে বসেছে। চলছে গান-বাজনাসহ অশ্লীলতা, অবাধে চলছে মাদক বিক্রি ও সেবন। আর এই করেই কোটি কোটি কাটার মিশন বাস্তবায়ন হয় মাজর কমিটির।

চৈত্র মাসের ১৭ তারিখের মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক ভক্ত, আশেকান ও সাধারণ জনগণ আসা যাওয়া করেন। ওরশকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মেলায় বসেছে রকমারি দোকান ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভক্তদের আস্তানা। মেলায় বিভিন্ন প্রকার পণ্য বিক্রয় ও ক্রয় হয়। কেউ কেউ মাদক ও অশ্লীলতার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে।

৭ দিনের এই মেলায় আগত দোকান থেকে অনুপাতে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। মাজারে মানত মানতে দেয়া হচ্ছে গরু,ছাগল, নগদ অর্থ, আগরবাতি ও মোমবাতি। মাজারে প্রতিদিন উঠছে লাখ লাখ টাকা। সব মিলে এখানে বানিজ্য হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। এ টাকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। এ টাকায় অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনছেন। সারা বছর এ মাজারটি অর্থ পাওয়ার সেক্টরে পরিণত হয়েছে। এ টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষ ও মামলা হয়েছে। কমিটির কয়েকজন দেখে মনে হয় মাজারের আয়ের টাকায় তারা ভালোই আছে।

সড়েজমিনে দেখা যায়, প্রতি বছর ন্যায়ে এখানে চলছে মাদক বিক্রি, সেবন ও অশ্লীলতা। মেলার শুরু আগেই নেশাখোর মাজারের চারপাশে আস্তানা গেরে বসেছে।

জানা যায়, সকল প্রকার মাদক দ্রব্যই পাওয়া যায় এ মেলায়। নেশাখোরদের দেখলেই মনে হয় মেলা প্রাঙ্গন যেন নেশার স্বর্গরাজ্য ও নিরাপদ স্থান। দলে দলে আস্তনা বেধে সেবন করছে মাদক দ্রব্য। মেলা প্রাঙ্গনের বাতাসে বইছে গাঁজার গন্ধ। লেংটার মেলাকে গাঞ্জিকাসেবিদের মেলা হিসেবে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, মেলায় সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মাদক বিক্রি ও সেনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রকৃতি পক্ষে বাস্তবতা অনেকাটাই উল্টো বলে জানান মেলায় আশা সচেতন মানুষরা।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার এ ব্যপারে বলেন, মেলায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোক আছে এবং একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছে এবং সবধরনের বিষয়ের প্রতিই আমাদের নজরদারী রয়েছে।

সোলেমান লেংটা উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান আউলিয়ার দাবিদার। বাংলা ১২৩০ সালে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার গোবিনাদপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে শাহ্সূফী সোলেমান লেংটা জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আলা বক্স ভূইয়া। তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন মতলবের বিভিন্ন অঞ্চলে। সোলেমান লেংটা কখনও পোশাক পরিধান করতেন না। তাই তার মাজারটি লেংটার মাজার হিসাবেই পরিচিত। লেংটা ১৮ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন। সোলেমান শাহ নারায়ণগঞ্জের বকতগুলির রাধানগরে এক নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এখন সেখানে তার আওলাদরা আছে বলে দাবি উঠেছে এবং তারা প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময় ওরসের ডাক দিচ্ছে।

শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটার ফকিরি লাভ সর্ম্পকে জানা যায়, ইমাম উদ্দিন মিয়ারা ছিল তিন ভাই। তিন ভাই নৌকা করে ভাদ্রমাসের এক অমাবশ্যা রাতে সোনারগাঁয়ে তাদের পিরের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। নৌকার মাঝি ছিলেন সোলেমান শাহ। পথিমধ্যে বৃষ্টি হয়, তিন ভাই আরাম করে নৌকার ভিতর।

সোলেমান শাহ ভিজে ভিজে নৌকা চালায় এবং গন্তব্যে হাজির হয়ে যায়।নির্দিষ্ট সময় পীর আসে এবং এ দৃশ্য দেখে রাগ হয়। পীর তখন তিন ভাইকে উলঙ্গ হয়ে আসতে বলে। তিন ভাই চিন্তায় পড়ে যায়। আপন মায়ের পেটের তিন ভাই কিভাবে উলঙ্গ হবে একে অপরের সামনে।পীর সাহেব মাঝি সোলেমানকে উদ্দেশ্য করে কাছে আসতে বলে। সোলেমান কাছে যায়। পীর তাকে হা করতে বলেন এবং মুখে ফুঁক দেয়। সেখান থেকেই সোলেমান লেংটা হয়ে বাড়ি ফিরে। সোলেমান লেংটা কখনও পোশাক পরিধান করতেন বলেই তিনি লেংটা নামে পরিচিত।

এ মাজারটিকে সবাই লেংটার মাজার নামেই চিনে। সোলেমান লেংটার অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। তার মধ্যে সোলেমান লেংটা কালিপুর রমিজ উদ্দিন প্রধানীয়ার বাড়িতে যান। দেখেন মহিলার নদী থেকে ঘট পুড়িয়ে ঘর, উঠান লেপছে। তিনি তাদের পানি আনার কষ্ট দেখে তাদেরকে চোখ বন্ধ করতে বলেন।তারা চোখ বন্ধ করলে লেংটা তার নফস টেনে প্রায় ২/৩ হাত লম্বা করে পুরো উঠান পানিতে ভিজিয়ে দেয়।

এ ঘটনা তিনি বিভিন্ন গ্রামে করেছেন।এক সময় মানুষ হজ্বে যেত জাহাজে কিংবা পায়ে হেঁটে। অনেক দিন লাগতো,হজ্বে যাওয়ার সময় অনেকেই লেংটাকে বদুরপুর দেখে গেছে, হজ্ব পালন করার সময় অনেকেই তাকে কাবা শরীফে দেখেছেন নামাজ আদায় করতে।

এমন অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা রয়েছে বলে জানা যায়। সোলেমান লেংটার বোনের বাড়ী বদুরপুরে মাজারটি অবস্থিত। ১৩২৫ বাংলা সনের ১৭ চৈত্র শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটা তার বোনের বাড়ি বদরপুর গ্রামে মৃত্যুবরণ করলে সেখানে কবর দিয়ে মাজার স্থাপন করা হয়। প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১৭ তারিখে তার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ৭দিনব্যাপী ওরশ্ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং মেলা বসে।

ওরশ শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে ও পর পর্যন্ত মেলা স্থায়ী হয়। এছাড়া প্রতি বছর ভাদ্র মাসে ও সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মাজারে ভক্তদের আগমণ ঘটে।

করেসপন্ডেট
৪ এপ্রিল,২০১৯