মতলব দক্ষিণ

প্রচণ্ড গরমে মতলব আইসিডিডিআরবিতে দু’সহস্রাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি

কয়েকদিনের টানা উত্তপাকে চাঁদপুর এবং এর আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত ১৬ দিনে মতলব আইসিডিডিআরবিতে দুই হাজারের বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে চিকিৎসা নিয়েছে।

এসব রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। ভ্যাপসা গরম ও আবহাওয়াজনিত কারণে এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর মতলব হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ওই হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৩শত ২৫ ডায়রিয়া রোগী। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয়েছে প্রায় ১৩৬ জন। এ সংখ্যা বছরের স্বাভাবিক সময়ের প্রায় তিনগুণ এবং গত দু’বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয় ৫০ জন। ২০১৭ সালে ওই ১৭ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০৫ এবং গত বছর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯৯ জন ভর্তি হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৮৫ জন রোগী ভর্তি হয়।

আইসিডিডিআরবির প্রশাসনিক সূত্র আরো জানায়, ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে নবজাতক থেকে চার বছর বয়সী শিশু ৯ শ ৭৯টি এবং ১৫ বছরের বেশি বয়সী ১০০৬ জন। বাকি ৩৪০ জন ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী। চাঁদপুর জেলা সদরের ৩০৩, ফরিদগঞ্জের ১৬১, হাইমচরের ৪৭, হাজীগঞ্জের ১৪৯, কচুয়ার ১১৩, মতলব উত্তরের ১৪৩, মতলব দক্ষিণের ১৪৯, শাহরাস্তির ৫৯, কুমিল্লার বরুড়ার ১০২, চান্দিনার ১০৩, কুমিল্লা সদরের ১০২, দাউদকান্দির ১০১, দেবীদ্বারের ৮০, লাকসামের ৬৮, মুরাদনগরের ৫৩, নাঙ্গলকোটের ৫০, তিতাসের ৪৬, লক্ষ্মীপুর সদরের ১৩০, রায়পুরের ১০০ ও রামগঞ্জের ৭৮ জন ভর্তি হয়। বাকি রোগীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলার।

মঙ্গলবার(১৬ এপ্রিল) বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। হাসপাতালটির বহির্বিভাগেও চিকিৎসা নিচ্ছে বেশ কিছু ডায়রিয়া রোগী। এসব রোগীর চিকিৎসা ও সেবায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা।

চান্দিনা উপজেলার হযরত আলী বলেন, ‘ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমি অওনে গত রবিবার বিকালে এনো আইছি। হেরা খাওনের স্যালাইন ও কিছু ওষুধ দিছে। পাতলা পায়খানা ও বমি একটু কমছে।’

দাউদকান্দি উপজেলার সুজন বলেন, ‘পাতলা পায়খানা ও বমি অওয়ায় গত শনিবার দুপুর ১২টায় এখানে ভর্তি অইছি। চিকিৎসকেরা খাবার স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াইছে। এখন কিছুডা বালার দিকে।’

আইসিডিডিআরবির মতলব হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা এনামুল ইসলাম বলেন, ভ্যাপসা গরম ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ করে লোকজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ময়লাযুক্ত ও খোলা খাবার খাওয়া এবং দূষিত পানি পান করায় এ রোগের বিস্তার ঘটেছে। শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী আক্রান্ত শিশুদের স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে।

সাত মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের খাওয়ার স্যালাইন, বেবি-জিংক, মায়ের বুকের দুধ ও বাড়ন্ত খাবার যেমন সুজি, খিচুড়ি ইত্যাদি খেতে দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য রোগীকে খাবার স্যালাইন, স্বাভাবিক খাবার এবং ক্ষেত্রবিশেষে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। বারবার পানির মতো পাতলা পায়খানা হলে, বেশি পিপাসা লাগলে, ঘন ঘন বমি হলে, পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে ও গায়ে জ্বর থাকলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। এ রোগ এড়াতে ময়লাযুক্ত ও খোলা খাবার এবং অবিশুদ্ধ পানি বর্জন করতে হবে।

প্রতিবেদক:মাহ্ফুজ মল্লিক
১৭ এপ্রিল,২০১৯

Share