মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শ্রমিক বহনকারী একটি বাস উল্টে ৫ বাংলাদেশিসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৩১ জন। রোববার রাত ১১টার দিকে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত পাঁচ বাংলাদেশির মধ্যে ২ জন চাঁদপুর, ২ জন কুমিল্লা ও ১ জন নোয়াখালীর। সোমবার দুর্ঘটনার খবর শুনে তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। কান্না-আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে প্রত্যেকের বাড়ি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
মালয়েশিয়া : কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের এমএএস কার্গো কমপ্লেক্সের ৪৩ জন কর্মী ছিলেন ওই বাসে। রাতের পালার ডিউটির জন্য বিভিন্ন হোস্টেল থেকে তাদের নিয়ে কার্গো কমপ্লেক্সে যাওয়ার সময় বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে। চাকা পিছলে গিয়ে বাসের সামনের অংশ রাস্তার পাশের গভীর নালায় পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচ বাংলাদেশিসহ ৯ জন নিহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাসচালকসহ মারা যান আরও পাঁচজন। এ সময় আহত হয়েছেন ৩১ জন। হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও নেপাল, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক রয়েছেন।
নিহত বাংলাদেশিরা হলেন- চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং বড়কুল ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের মো. আনোয়ারের ছেলে সোহেল (২৪), চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার চরভাগল ৩নং ওয়ার্ডের মো. আমির হোসেনের ছেলে আল আমিন (২৫), কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার দুরলবপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে মহিন (৩৭), কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার হাসানপুর কলেজপাড়ার ঢাকাগাঁও গ্রামের মো. ইউনুস মুন্সির ছেলে মো. রাজিব মুন্সি (২৭) ও নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার নোয়াখোলা ২নং ওয়ার্ডের নুর মোহাম্মদের ছেলে গোলাম মোস্তফা। তাদের লাশ বর্তমানে সেরডাং হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
এছাড়া পরিচয় পাওয়া আহত বাংলাদেশিরা হলেন- ইমরান হোসাইন, মোহাম্মদ নাজমুল হক, মোহাম্মদ রজবুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইউনুস, জাহিদ হাসান, শামীম আলী ও মোহাম্মদ রাকিব। এদের মধ্যে চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।
কেএলআই এয়ারপোর্টের ওসিপিডির সহকারী কমিশনার জুলকিফলি আদম শাহ গণমাধ্যমকে বলেন, বাসটিতে থাকা বিভিন্ন দেশের হতাহত শ্রমিকরা এমএএস কার্গোতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে সারডাং, বান্তিং ও পুত্রাজায়ার বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে হতাহতদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, নিহত বাংলাদেশি ৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসা চলছে। যারা নিহত হয়েছেন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দ্রুত তাদের মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ : নিহত আল আমিন ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাগল গ্রামের মাওলানা আমির হোসেনের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে আল আমিন ছিলেন বড়। মাত্র ৭ মাস আগে পাশের বাড়ির মিলন গাজীর ছেলে রাসেলের সঙ্গে আল আমিন জীবিকার সন্ধানে মালেয়শিয়ায় যান। সোমবার সকালে তার মৃত্যুর সংবাদে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। আশপাশের প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসেন। নিহতের বাবা মাওলানা আমির হোসেন বলেন, তিন লাখ টাকা ধার করে ছেলেকে পাঠিয়েছি। নিহতের মা আমেনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার আল আমিনকে তোমরা নিয়ে আসো।
এদিকে নিহত সোহেলের বাড়ি হাজীগঞ্জে। উপজেলার ৭নং বড়কুল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড দেবীপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, দেবীপুর গ্রামের প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের একমাত্র ছেলে সোহেল। সাত মাস আগে মালয়েশিয়া যান তিনি। খবর পেয়ে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
চাটখিল (নোয়াখালী) : নিহত হাফেজ গোলাম মোস্তফা চাটখিল উপজেলার দক্ষিণ নোয়াখলা গ্রামের নুর মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে। তার ভাই নুরউদ্দিন জানান, সোমবার সকালে তারা টেলিফোনে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। ৯ মাস আগে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনার জন্য জমি বিক্রি করে মোস্তফা মালয়েশিয়ায় যান। তার মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে।
বার্তা কক্ষ
৯ এপ্রিল,২০১৯