Home / বিশেষ সংবাদ / পরিবেশ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মাহফুজ উল্লাহর বর্ণাঢ্য জীবন
mahfuz-ullah-journalist

পরিবেশ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মাহফুজ উল্লাহর বর্ণাঢ্য জীবন

না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলাদেশে পরিবেশ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ (প্রথম পথপ্রদর্শক) সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। (ইন্না…রাজিউন)।

থাইল্যান্ডের স্থানীয় সময় আজ শনিবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে পরিবারের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পরে মুঠেফোনে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন মাহফুজ উল্লাহর বড়ভাই অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। বেশ কিছুদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিতসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।

মাহফুজ উল্লাহ শুধু বাংলাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিকই ছিলেন না তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, কলামিস্ট, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও পরিবেশবিদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর ছিলেন।

প্রবীণ এ সাংবাদিক ও কলামিস্ট নোয়াখালী জার্নালিস্ট ফোরামের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম পরিবেশ সাংবাদিকতা শুরু করেন। এজন্য তাঁকে পরিবেশ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বলা হতো।

১৯৫০ সালের ১০ মার্চ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন দেশের এই খ্যাতিমান সাংবাদিক । তাঁর পিতার নাম হাবিবুল্লাহ এবং মাতার নাম ফয়জুননিসা বেগম। ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত মুজাফফর আহমেদের দৌহিত্র তিনি।

ছাত্রাবস্থাতেই মাহফুজ উল্লাহ সাংবাদিকতা পেশায় নিবেদিত হন। বাংলাদেশের একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্মলগ্ন থেকে কাজ করেছেন মাহফুজ উল্লাহ।

১৯৭২ সালে তিনি সাপ্তাহিক বিচিত্রায় যোগ দেন। বর্ণাঢ্য দীর্ঘ্য সাংবাদিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছেন মাহফুজ উল্লাহ।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিক্ষগতাও করেছেন মাহফুজ উল্লাহ। চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

মৃত্যুর পূর্বে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মাহফুজ উল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্রজীবনে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন তিনি। ছাত্র রাজনীতির কারণে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন মাহফুজ উল্লাহ।

এরপর সে সময় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বাম রাজনীতি দিয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করলেও বেশ কয়েক বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন মাহফুজ উল্লাহ। যে কারণে তার বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসাবেও পরিচিতি রয়েছে।

রেডিও ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে সরব উপস্থিতি ছিল মাহফুজ উল্লাহর। বেশ কয়েকটি রেডিও ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তাকে উপস্থাপনাও করতে দেখা গেছে।

আন্তর্জাতিকভাবে একজন সক্রিয় পরিবেশবিদ হিসাবে পরিচিত মাহফুজ উল্লাহ। মাঝে চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসে কাজ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন। রেডিও ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনাসহ একাধিক টক শো অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে সংবাদ ও রাজনীতি নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ করতেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন সক্রিয় পরিবেশবিদ এবং বাংলাদেশে তিনিই পরিবেশ সাংবাদিকতার সূচনা করেন।

এছাড়ও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর করজারভেশন অব নেচার-এর আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বাংলাদেশী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৫০ এর অধিক বই লিখেছেন মাহফুজ উল্লাহ। বইগুলো আর্ন্তজাতিকভাবে খ্যাতিলাভ করেছে। বইগুলোর অধিকাংশই বিশ্বের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সংগৃহীত আছে।

তার গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়া: রাজনৈতিক জীবনী, যাদুর লাউ, যে কথা বলতে চাই, অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন : গৌরবের দিনলিপি (১৯৫২-৭১), উলফা ও অ্যাসোসিয়েশন ইন আসাম, বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ হার স্টোরি উল্লেখযোগ্য।

বার্তা কক্ষ
২৭ এপ্রিল ২০১৯