চাঁদপুরে ৮ উপজলোয় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা কৃষি ও দারিদ্রবিমোচনে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাদ্দ দিয়েছে। অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছরে ৩০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বেশি বরাদ্দ রয়েছে ।
সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে রোববার (৯ সেপ্টেম্বর ) বিষয়টি জানা গেছে।
প্রতি অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের তফশীলি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে কৃষি ও দারিদ্রবিমোচন খাতে বরাদ্দ দিয়ে থাকে ।সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংকসমূহ অনুপাতিক হারে ও চাহিদা পূরণে ঔ বরাদ্দ ভাগ করে দেয়া হয় । সকল খাতে কীভাবে ঋণ প্রদান করা হবে তারও নীতিমালা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে চাঁদপুর জেলার কৃষিঋণ কমিটির সব ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভায় জেলার অভিভাবক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের উপস্থাপিত তথ্যে বিষয়টি জানানো হয় এবং কৃষিঋণ কমিটি প্রতিমাসের সভায় অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয় ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, সোনালী,অগ্রণী,জনতা,বাংলাদেশ কৃষি,রূপালী, বেসিক,কর্মসংস্থান,বিআরডিবি ও চাঁদপুরের বেসরকারিভাবে পরিচালিত ২০ টি ব্যাংকে ওই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বা সরকারিভাবে পরিচালিত ৭ টি ব্যাংকে ২৪৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ও বেসরকারি ২১ টি ব্যাংকে ৫৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক বিতরণের নির্দেশ রয়েছে ।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের ২০টি শাখার চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরে ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা,অগ্রণী ব্যাংকের ২০ টি শাখায় ১৭ কোটি ১৬ লাখ , জনতা ব্যাংকরে ১৫ টি শাখায় ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার,বাংলাদশে কৃষি ব্যাংকরে ২৮টি শাখায় ১৯৮ কোটি ৮২ লাখ,পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ২ কোটি ১৫ লাখ, কর্মসংস্থান ব্যাংক ৮ কোটি ৩০ লাখ ,রূপালীতে ৪৮ লাখ এবং বেসিক ব্যাংককে ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে জেলার ২১ টি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ৫৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেযা হয়েছে । ব্যাংকগুলো হলো : ন্যাশানাল, ইসলামী ,পূবালী,উত্তরা, আল-আরাফা ,শাহজালাল,ফাস্ট সিকিউরিটি ,এবি ,দি সিটিি ইউনাইটেড,ব্র্যাক ,মার্কেন্টাইল ,এনসিসি,সোস্যাল ,প্রাইম,ব্যাংক এশিয়া, পদ্মা ,ডাচ,যমুনা, ট্রাস্ট ও স্ট্রান্ডার্ড ব্রাংক সমূহ।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখাগুলো ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪% সুদে‘ডাল,তৈলবীজ,মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা’ চাষাবাদের জন্যে ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ।
সংশ্লিষ্ঠ একজন ব্যাংক কর্মকর্তা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘একজন কৃষকের ঋণ পাওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে তার অবশ্যই চাষাবাদ উপযোগী জমি থাকতে হবে। বর্গ চাষীরাও জমির মালিকগণের অনুমতিপত্র সহ আবেদন করলে ঋণ পাবেন । অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন মৎস্য,গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি প্রতিপালনে সর্ব্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন ।’
প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলো কৃষি উৎপাদন,সেচযন্ত্র ক্রয়,পাওয়ারটিলার ক্রয়,গরু মোটাতাজাকরণ,পল্ট্রীফার্ম,গাভীপালন,মৎস্যচাষ,শাক-সবজি উৎপাদন ও রবিফসল করতে কৃষকদের সহজ শর্তে কৃষকদের ঋণ প্রদান করবে। সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে বর্গাচাষীদেরও কৃষিঋণ প্রদান করার নির্দেশ রয়েছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ঋণ প্রদানের বেলায় জমি আছে ও নিজে চাষাবাদ করে এমন কৃষকদের ব্যাংকের মাঠ সহকারীগণ তাৎক্ষণিকভাবে ঋণ দেবার প্রস্তাব করলে ব্যাংক ৯% সরল সুদে কৃষি উৎপাদন খাতে ঋণ বিতরণ করে থাকে ।’
সারাদেশে জাতীয়ভাবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে । কৃষি ও পল্লী ঋণের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে,রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত বাংকগুলোর স্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের নিট ঋণ ও অগ্রিমের ২ % হারে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লক্ষ্যমাত্রার ৬০% বিতরণ করতে হবে শস্য খাতে, ন্যূনতম ১০% মৎস্য খাতে এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ১০% বিতরণ করতে হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি, দারিদ্র্য বিমোচন ও অন্যান্য খাতে বাকি অর্থ বিতরণ করার নির্দেশ রয়েছে ।
প্রসঙ্গত ,২০১৮-২০১৯ সরকারিভাবে পরিচালিত ব্যাংকগুলো ১৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৪০ কোটি ৮১ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। যার হার যথাক্রমে ৭১% ও ৮৫%। ১ লাখ ১শ’৩৯ জন ঋণগ্রহীতার নিকট ঔ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৩৮৩ কোটি টাকা । এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ টাকার পরিমাণ হলো ৭৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
প্রতিবেদক : আবদুল গনি , ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯