বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মুজিবুর রহমান খাঁ ১৯১০ সালের ২৩ অক্টোবর নেত্রকোনার উলুয়াটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় আঞ্জুমান হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স ১৯২৮ সালে এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বিএ ১৯৩৪ সালে পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন।
কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে চব্বিশ পরগনার হারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন। এর পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতাও শুরু করেন। তিনি প্রথমে দৈনিক আজাদ পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক (১৯৩৬-৩৯) এবং পরে যুগ্ম-সম্পাদক (১৯৩৯-৬৫) হন। পরে তিনি সাপ্তাহিক কমরেড (কলকাতা), মাসিক মোহাম্মদী (ঢাকা) ও দৈনিক পয়গামের সম্পাদক (১৯৬৫-৭১) এবং স্বাধীনতা-উত্তরকালে আজাদ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হন।
মুজিবুর রহমান খাঁ বিভিন্ন সামাজিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি অল বেঙ্গল অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট রাইটার্স গিল্ডের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির (১৯৪৪) সম্পাদক, ভারতের প্রথম গণপরিষদের নির্বাচিত সদস্য (১৯৪৬), পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক (১৯৫৪), পাকিস্তান আর্টস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক এবং বুলবুল ললিতকলা অ্যাকাডেমির সহসভাপতিরূপে দায়িত্ব পালন করেন।
মুজিবুর রহমান খাঁ সাহিত্য, ইতিহাস, মনীষীদের জীবনী ইত্যাদি বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। ‘বিলাতে প্রথম ভারতবাসী’ (১৯৩৯) গ্রন্থে তিনি বিলাত সম্পর্কে ভারতীয়দের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তার অন্যান্য রচনা হচ্ছে : সাহিত্যের সীমানা (১৯৬৭), সাহিত্য ও সাহিত্যিক (১৯৭১), মহানবী (১৯৮০), আমাদের ইতিহাস, সাহিত্যের বুনিয়াদ ইত্যাদি।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি পাকিস্তান সরকারের ‘সেতারা-ই-কায়েদে আজম’ পদক লাভ করেন। ১৯৫৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হলে মুজীবুর রহমান খাঁ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি নির্বাচিত হন।
সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’-এ ভ‚ষিত হন তিনি। মুজিবুর রহমান খাঁ ১৯৮৪ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকায় নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
বার্তা কক্ষ , ৫ অক্টোবর ২০১৯