বিদায় বেলায় ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন চাঁদপুরের সদ্য বিদায়ী পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির বিপিএম, পিপিএম। তাঁকে ফুল সজ্জিত গাড়িতে বসিয়ে রশি টেনে চাঁদপুর থেকে বিদায় জানালেন চাঁদপুর জেলা পুলিশের সকল সদস্যগবৃন্দ।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে চাঁদপুর থেকে বিদায় নিয়ে যান তিনি। এর আগে শনিবার রাতে চাঁদপুর পুলিশ লাইন্সে বিদায়ী পুলিশ সুপারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। উক্ত বিদায় লগ্নে সহকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হন বিদায়ী পুলিশ সুপার। এছাড়া জেলার বিভিন্ন সংগঠন বিদায়ী পুলিশ সুপারকে অংসখ্য সংবর্ধনা প্রদান করেন।
গেলো ১৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক পরিপত্রে পুলিশ সুপার জিহাদুল কবিরকে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ও অতিরিক্ত ডিআইজি, ঢাকা রেঞ্জ হিসেবে বদলীর আদেশ দেয়া হয়।
বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সকল থানার পুলিশ পরিদর্শকসহ জেলা পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ফুলে ফুলে সাজিয়ে পুলিশ সুপারকে বিদায় জানান।
উক্ত বিদায় বেলায় জেলা পুলিশের অতিঃ পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ মিজানুর রহমান (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিঃ পুলিশ সুপার (সদর) আসাদুজ্জামান, অতিঃ পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) আফজাল হোসেন, সিনিঃ সহকারি পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) শেখ রাসেল, সিনিঃ সহকারি পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) আহসান হাবীব, সকল থানার অফিসার ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শকসহ জেলা পুলিশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীগন উপস্থিত ছিলেন।
জিহাদুল কবির খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ২০ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন। বাগেরহাট জেলার এ কৃতি সন্তান ব্যক্তি জীবনে এক কন্যা ও ছেলে সন্তানের জনক। তাঁর সহধর্মিণী সাদিয়া কবির ইডেন মহিলা কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন। বর্তমানে গৃহীণী।
এক নজরে অতিরিক্ত পুলিশ-মহাপরিদর্শক (পুলিশ সুপার) জিহাদুল কবির
১৯৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার কাজাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জিহাদুল কবির। বাবা আহম্মদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মা আয়েশা গৃহিণী। ছয় বোন-তিন ভাইয়ের সংসারে জিহাদুল সবার ছোট।
১৯৯০ সালে কাড়াপাড়া শরৎচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯২ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করেন। ১৯৯৭ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ইন ফরেস্টি বিভাগে বিএসসি পাস করেন।
২০তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে প্রথম বারই সফল হয়ে গেলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিসিএসের আগে তিনি একটি সরকারি চাকরি করতেন। এসিএফ কক্সবাজারে। সেখানে দু’বছর কাজ করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় টিকে গেলে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন পুলিশের এএসপি হিসেবে। প্রথম পোস্টিং হয় গৌরনদী সার্কেল (এএসপি) হিসেবে। এরপর সীতাকুণ্ড, ঢাকা মেট্রো, এসি ডিবি, এসি এমটি, এডিসি ট্রান্সপোর্টে কর্মরত ছিলেন। এরপরই আসে মিশনের পালা। ২০০৬ সালে এক বছরের জন্য চলে যান আইভরি কোস্ট।
সেখান থেকে ফিরে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। এরপর আবার ঢাকা মেট্রোর এডিসি হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে আবার মিশনে চলে যান লাইবেরিয়া। সেখানে থেকে ফিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ঝিনাইদহ জেলায় নিযুক্ত হন। ২০১২ সালে প্রথম পুলিশ সুপার হিসেবে মাগুরা জেলায় নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
তারপর পর্যায়ক্রমে ২০১৫ থেকে ২০১৬ রাজবাড়ি ও ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পাবনা জেলা, ১২ আগস্ট ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত চাঁদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। কর্মজীবনে পুলিশ সুপার হিসেবে চাঁদপুর তাঁর ৪র্থতম জেলা।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯