চাঁদপুর

৯ সন্তান থেকেও বেওয়ারিশ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন খালেক মিয়া

স্ত্রী এবং ৯ সন্তান থেকেও অসুস্থ হয়ে বেওয়ারিশ ভাবে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় কাতারাচ্ছেন ৭০ বছর বয়সী অসহায় বৃদ্ধ আব্দুল খালেক মিয়ার জীবন।

একসময় তার যৌবন ছিলো, প্রতিবন্ধী হয়েও সংসার চালানোর মতো কিছুটা সার্মথ্য ছিলো। তাই সেই সময়ে স্ত্রী, ছেলে সন্তানদের কাছে তার কদরও ছিলো। যৌবনের ভাটায় যখন ধীরে ধীরে সব শেষ হয়েছে তখন তাদের কাছে তার কদরও ধীরে ধীরে কমে যায়। এখন সবাই থেকেও যেনো তার আপন কেউ নেই।

গত কয়েক দিন ধরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ২য় তলার পুরুষ বিভাগের মেঝের একটি বিছানায় তাকে শুইয়ে শুধু দু,হাত এবং পুরো শরীর নাড়াতে দেখা যায়। তবে কোনদিনই তাকে সেবা যত্ন করার জন্য তার শয্যা পাশে আপন কাউকে দেখতে পাওয়া যায়নি। তার এমন অসহায়ত্ব দেখে খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি ১৫ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। শুধু মাত্র হাসপাতালের বিভিন্ন নার্স, আয়া এবং পার্শ্ববর্তী রোগীর লোকজন তার সেবা যত্ন এবং খোঁজ খবর রাখেন।

আব্দুল খালেক জানান, হাজীগঞ্জ উপজেলার দেবপুরস্থ চতনপুর গ্রামে তার বাড়ি। তার ঘরে স্ত্রী হাসিনা বেগম, ২ ছেলে এবং ৭ মেয়ে সন্তান রয়েছে। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে হিরন এবং ছোট ছেলে মহসিন। কিন্তু তাদের কারো কাছেই তার কোন মূল্য নেই। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর দু, ছেলেও বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। তারা ঢাকায় ফার্ণিচারের কাজ করেন।

তিনি জানান, গত এক বছর ধরে কোমরের হাড় ভাঙ্গা নিয়ে পর্যায়ক্রমে এই হাসপাতালে ৮ বার চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। সর্বশেষ গত ১৫ দিন পূর্বে আবারও অসুস্থতা বোধ করলে গ্রামের মানুষের সাহয্য সহযোগিতায় আবারো হাসপাতালে ভর্তি হন।

এছাড়া তার শরীর এবং হাত, পা সারাক্ষন কাঁপার প্রসঙ্গে তিনি জানান, জন্মের পর থেকেই তার শরীরের এমন অবস্থা। প্যারালাইসিসের রোগীর মতো সারাক্ষন তার পুরো শরীর (নড়তে) কাঁপতে থাকে। যা অনেকটা প্রতিবন্ধীর মতোই। আর শরীরের এমন অবস্থা নিয়েই পাকিস্তান আমল থেকে জীবনের তাগিদে চট্টগ্রাম থেকে শুটকি এনে গ্রামে বিক্রি করতেন। তাতেই কোন রকম চলতো তার সংসারের চাকা।

তবে তিনি মোট তিনটি বিয়ে করেছেন। তার কারন প্রথম স্ত্রী জন্ডিস এবং দ্বিতীয় স্ত্রী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সর্বশেষ বিয়ে করেন হাসিনা বেগমকে। যার বয়স ৪০ বছর হবে বলে তিনি জানান। যার কারনে এই বৃদ্ধ তার কাছে একেবারেই মূল্যহীন। তিনি এমন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেও কখনোই একটি বারের জন্য তার স্ত্রী এবং কোন ছেলে মেয়ে তার সেবা যত্নতো দুরের কথা তাকে হাসপাতালে এক নজর দেখতে আসেননি।

তাই একাকিত্ব নিয়েই অসহায়ের মতো অযত্নে অবহেলায় হাসপাতালের মেঝের বিছানায় শুয়ে শুয়ে দিন পার করছেন আব্দুল খালেক।

অসহায় প্রতিবন্ধী আব্দুল খালেক মিয়ার আকুতি চাঁদপুর জেলা প্রশাসন কিংবা সরকারি ভাবে যদি তাকে কিছু অনুদান প্রদান করা হয় তাহলে তিনি ভিক্ষা বৃত্তির পথ না ধরে সে অনুদান দিয়ে গ্রামে বসে ছোট খাটো ব্যবসা করে কোন রকম জীবনের বাকি দিন গুলো পার করতে পারবেন।

প্রতিবেদক : কবির হোসেন মিজি, ৪ নভেম্বর ২০১৯

Share