মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন আইন নিয়ে। বাবাও আছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। তবে শিক্ষক হিসেবে নন, শিক্ষার্থী হিসেবে। তা–ও আবার মেয়ের জুনিয়র হিসেবে!
অবাক করা এ ঘটনাটি ভারতের মুম্বাই শহরের। ‘হিউম্যানস অব বোম্বে’ নামের একটি ফেসবুক পেজে মেয়ে নিজেই বর্ণনা দিয়েছেন পুরো ঘটনার। তবে বাবা কিংবা মেয়ে কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি।
কীভাবে এই বয়সে এসে আবার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ জন্মাল বাবার, সেটি শোনানোর আগে বাবার ছোটবেলা সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন মেয়ে, ‘আমার বাবা সব সময়ই আইন বিষয়টির প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। আদালত, শুনানি এসব বিষয় খুব পছন্দ করতেন তিনি। নতুন নতুন কেসের কথা শুনতে চাইতেন। তিনি আইন নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর পরিবারের সে সামর্থ্য ছিল না। সে কারণে একটি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে যোগদান করেন। সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন তিনি।’
পেশায় পরামর্শক বাবা কীভাবে আইনের প্রতি আবার আগ্রহী হলেন, এরপর সেই গল্পই শুনিয়েছেন মেয়ে, ‘আমার বোন একজন চিকিৎসক। আমি ও আমার ভাই দুজনেই আইন নিয়ে পড়ছি। যখন আমি আইন নিয়ে পড়তে শুরু করলাম, বাবা আমার ক্লাসের খুঁটিনাটি সব বিষয়ে জানতে ভীষণ উৎসাহী হয়ে উঠলেন। এক দিন আমরা অনুভব করলাম, এখন তো বাবার হাতে সময় আছে। খুব সহজেই তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করতে পারেন!’
এরপরই বাবাকে নিজের বিভাগের জুনিয়র হিসেবে পাওয়ার অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন তিনি, ‘বিশ্বাস করুন আর না–ই করুন, আমি ও আমার বাবা এখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়ছি। সত্যি বলতে বাবা আমার জুনিয়র! আমরা দুজন মিলে অনেক মজা করি। আমরা আমাদের শিক্ষক, সহপাঠী এমনকি অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েও গল্প করি। আমার যখন ক্লাস থাকে না, তখন তিনি আমার বন্ধুদের সঙ্গে বসেও গল্প করেন! আমার বন্ধুরাও তাঁর সঙ্গ খুব উপভোগ করে। একদিন তো তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার জন্য ডেকে নিয়ে গেলেন আমাকে!’
বাবার স্বপ্নপূরণের খুশি যেন ছুঁয়ে গেল মেয়েকেও, ‘বাবা তাঁর প্যাশনের জায়গায় ফিরে গেছেন, এটা দেখতেই আমার ভীষণ ভালো লাগে। কবে যে আমরা দুজনেই আইনজীবী হব! আশা করি বাবা আমাকে যেভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন, আমিও বাবাকে সেভাবেই অনুপ্রাণিত করতে পারব। আমরা দুজনেই এখন আমাদের স্বপ্নকে তাড়া করছি।’
বাবা-মেয়ের এই জুটি এরই মধ্যে অনলাইনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ‘হিউম্যানস অব বোম্বে’ পেজ থেকে শেয়ার হওয়া পোস্টটিতে ১২ হাজারের বেশি লাইক পড়েছে, ইতিবাচক মন্তব্যও এসেছে অনেক। একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, ‘আজ সারা দিনে এর চেয়ে ভালো কিছু আর দেখিনি।’
বার্তা কক্ষ, ৮ আগস্ট ২০১৯