Home / বিশেষ সংবাদ / দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিজ্ঞান চর্চাকে শক্তিশালী করতে হবে
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিজ্ঞান চর্চাকে শক্তিশালী করতে হবে

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিজ্ঞান চর্চাকে শক্তিশালী করতে হবে

বিজ্ঞান শব্দটা শুনলেই অনেকে আতকে উঠি। চোখের সামনে ভেসে উঠে যন্ত্রপাতি, আবিষ্কার, গবেষণা আর প্রচুর অর্থ ব্যয়। এ কারণেই বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু দেখলে আমরা এড়িয়ে চলে যাই। মনে হয় কঠিন কোনো কিছু আমাদের সামনে হাজির হয়েছে।

আসলে বিজ্ঞান কি আমাদের জন্য ভীতিকর কিছু। না,আসলে বিজ্ঞান হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। অর্থাৎ কোনো কিছুর ব্যাখ্যা পরীক্ষা আর যুক্তি দিয়ে চিন্তা করাটাই বিজ্ঞান। কিন্তু আমরা অনেকেই তা করতে নারাজ। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে রাজনীতি, চিকিৎসা, শিক্ষা সব কিছু আমুল পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে। একটি জাতিকে অসভ্য থেকে সভ্যতায়, অনুন্নত থেকে উন্নতিতে নিয়ে যায় বিজ্ঞান।

বর্তমান সভ্যতায় সবচেয়ে বড় অবদান রেখে যাচ্ছে বিজ্ঞান। আর সেটি হচ্ছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে যেভাবে পরিচালিত করবেন সেভাবে এর প্রতিফলন ঘটবে। আজকের এ বিজ্ঞানের যুগে,সভ্যতার যুগের আমুল পরিবর্তন করেছেন অসংখ্য বিজ্ঞানী। অসংখ্য অজানা ঘটনা ধীরে ধীরে যখন প্রকাশিত হয়েছে। তখন মানুষের জ্ঞান বিকশিত হয়েছে, মানুষ বর্তমান উন্নত বিশে^ এসে দাঁড়িয়েছে।

দেশে বহু বিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছে। বিজ্ঞানীদের কীর্তি আমাদের এখনো অনুপ্রাণিত করে। ১৯৮০ দশক থেকে ১৯৯০ দশক পর্যন্ত অঞ্চলে অঞ্চলে বহু বিজ্ঞান ক্লাব ছিল। এ ক্লাবগুলো নিয়মিত বিজ্ঞান চর্চা করতো। ক্লাবগুলো পাঠাগার তৈরি করে পাঠকদের মনোরঞ্জন করার চেষ্টা করতো। ১৯৯০ দশকের পর বিজ্ঞানপ্রীতিদের মধ্যে হঠাৎ ভাটা পড়তে শুরু করে। রাজনৈতিক টানাপোড়ান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধমুখি, রাষ্ট্রীয়ভাবে বিজ্ঞানে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ প্রদান না করার জন্যই ক্লাবগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৯২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১১৫ জন বিজ্ঞানী চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। ১৯৯২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৫০জন এবং ২০০১ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত ৬৫ জন চাকরি ছেড়েছেন। তারা বিভিন্ন বঞ্চনা ও হতাশার শিকার হয়েছেন বলে পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০০২ সালে আমি কলেজে পড়াবস্থায় চাঁদপুরের স্ফুটনিক বিজ্ঞান ক্লাব থেকে সদস্য হবার আহ্বান পাই। ক্লাবের সদস্যও হই। ক্লাবের সভাপতি তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন কলেজের তরুণদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকায় প্রবাসী জীবন কাটাচ্ছেন। ওই সময় আরো ২-১টি ক্লাব ছিল। তাদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে ভাল লাগত। কিন্তু হতাশা, আর তরুণদের অনাগ্রহ ধীরে ধীরে ক্লাবগুলো বিলীন হয়ে যায়।

চাঁদপুরেই নয় দেশে উল্লেখ্যযোগ্যভাবে ভালো কোনো ক্লাব গড়ে উঠেনি। এমনকি ভাল বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো ম্যাগাজিনও প্রকাশ হয়নি । যে বিজ্ঞান চর্চাকে আরো ত্বরান্বিত করবে, প্রণোদনা দিবে।

দীর্ঘদিন পর প্রথমআলো ‘বিজ্ঞান চিন্তা’ নামক বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন বের করতে থাকলেও তরুণদের মাঝে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করতে পারেনি। তবে কিছু কিছু তরুণরা রয়েছে যারা বিজ্ঞান চর্চা করছে এবং এর প্রতিফলন পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি। কিন্তু এ সংখ্যাটা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর খুবই অপ্রতুল।

ড.আব্দুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন বলেছেন ‘সারা পৃথিবী আজ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রয়োগের মধ্য দিয়ে বিপুল বেগে এগিয়ে চলেছে। শুধু যেন এগোতে পারছি না আমরা। এদেশে গত পঁচিশ বছরের বিজ্ঞান-প্রযুক্তির খতিয়ান নিতে গেলে একাত্তরের স্বাধীনতা আমাদের মনে যে বিপুল প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল । তাকে স্তম্ভ করে দিয়ে আমাদের সীমাহীন ব্যর্থতাই যেন বেশি করে চোখে পড়ে।’

তিনি আরো বলেন , ‘১৯৯৬ সালে ‘আজকের বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থে তিনি এ কথা বলেছেন। অথচ নির্মমতা এ যে, ২০১৯ এ এসেও তার কথাগুলো বাস্তবতার সাথে কতটা মিলে যাচ্ছে। আমরা এখনও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছি। এ ব্যর্থতা আমাদের সীমাহীন।’

আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি যতটা না দুর্বল ঠিক তার বিপরীত বিজ্ঞানের প্রতি হীনমন্যতা প্রকাশ করে। কিভাবে সম্ভব তরুণদের মাঝে বিজ্ঞানকে আরো উৎসাহিত করে তোলা। বিজ্ঞানকে নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করা, উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা।

দেশের অনেক বড় বড় বিষেশজ্ঞ রয়েছেন। অনেকের বিভিন্ন মত রয়েছেন। আমার ছোট মস্তিস্কে মনে করি কিছু জায়গায় প্রণোদনা দিতে পারলে বিজ্ঞানে মানুষদের আরো ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি করা যাবে। দেশে সীমিত বিজ্ঞান লেখক রয়েছে।

একুশে বই মেলায় বিজ্ঞানের ওপর বিভিন্ন বই প্রকাশিত হচ্ছে। পূর্বের তুলনায় এখন অনেক বিজ্ঞান বই প্রকাশিত হচ্ছে। তবে সারা বছর ব্যাপি বিজ্ঞানের ওপর বই আরো প্রকাশনায় মন দেয়া উচিত। এ বইগুলোর মূল্য নির্ধারণে সব ধরনের ক্রেতাদের কথা বিবেচনা নিয়ে প্রচার প্রচারণা করতে পারলে বিজ্ঞান বই কিনার প্রতি অনেকের আগ্রহ বাড়বে।

সরকারকে দুরদর্শি প্ল্যান নেয়া উচিত এবং সংশ্লিষ্টদের বাংলায় বিজ্ঞানকে নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি, ফেসবুক পেজ, গ্রুপ তৈরি করে বিশে^র বিজ্ঞানের হালচাল নিয়ে নিয়মিত আপডেট দিলে অনেক তরুণ-তরুণীদের, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকশিত হবে। বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা জন্মাবে। কিন্তু সার্চ করলে দেখা যায়, দেশে বিজ্ঞান নিয়ে কোনো উপযুক্ত ওয়েবসাইট নিয়ে, কিছু ফেসবুক পেজ রয়েছে যা খুবই দুর্বল।

সরকারের উচিত হবে স্কুলে, কলেজে ল্যাবরেটরি গুলোকে আরো মানসম্মত পর্যায় নিয়ে যেতে এবং বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধীৎসু মনোভাব তৈরি করা।
দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনে বিজ্ঞান চর্চাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং বিজ্ঞানপ্রেমীদের সুসংগঠিত করে তুলতে হবে। সরকারকে প্রণোদনা, বিশেষজ্ঞদের সহায়তা এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনকে উদ্যোক্তা হতে হবে। তাহলে বিকশিত হয়ে উঠতে আমাদের জ্ঞান,উদ্ভাবন হতে নতুন সৃষ্টি,আর অর্থনৈতিক চাকার গতি আরো বৃদ্ধি পাবে।

লেখক পরিচিতি : আবদুল আউয়াল (লিটন পাটওয়ারী), স্বত্তাধিকারী, প্রিজম কম্পিউটার সেন্টার ,জোড় পুকুর পাড়, চাঁদপুর । ২৩ জুন ২০১৯