সম্ভাব্য সব ধরনের পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে দেশের মানুষ ও সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে সীমান্ত রেখার পাশে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযানের পর দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারত বলছে, কাশ্মীরে ১২টি মিরেজ ২০০০ জেট বিমান এ হামলায় অংশ নিয়েছে। ১ হাজার কেজি বোমা বর্ষণ করে জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদের বেশ কিছু ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হামলায় অন্তত ৩০০ জঙ্গি মারা গেছে। তবে হামলায় কোনো ধরনের হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। তারা বলছে, পাকিস্তানের যথাযথ জবাবে পালিয়ে গেছে ভারতীয় বিমান।
ভারতের ওই হামলার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সদস্যদের নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে জরুরি বৈঠকে বসেন ইমরান খান। বৈঠকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় হামলাকে চূড়ান্ত আগ্রাসন বলে মন্তব্য করা হয়। পরে ইমরান খান বলেন, ‘পছন্দনীয় সময়ে এবং সঠিক জায়গায় উপযুক্ত জবাব দেবে পাকিস্তান।’
বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে ইমরান খান সশস্ত্র বাহিনী ও দেশের সাধারণ মানুষকে সমস্ত পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এই অঞ্চলে ‘ভারতের দায়িত্বহীন নীতি’কে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থমন্ত্রী, জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ চেয়ারম্যান, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, নৌ-বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল জাফর মাহমুদ আব্বাসি, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনোয়ার খান ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি বলছে, কাশ্মীরে হামলায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির যে দাবি ভারত করেছে তার কল্পনাপ্রসূত, ভিত্তিহীন। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদির সরকার এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ বলছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি ঝুঁকিতে ফেলছে নয়াদিল্লি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেছেন, ভারতের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া উচিত। উপযুক্ত জবাব দেয়ার অধিকার তার দেশের রয়েছে। ভারতের হামলাকে তিনি আগ্রাসন বলে মন্তব্য করেছেন।
এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে আগ্রাসন বলবো। এটা সীমান্ত রেখার লঙ্ঘন। আত্মরক্ষা এবং যথাযথ জবাব দেয়ার অধিকার রয়েছে পাকিস্তানের।’
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ভয়াবহ আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় ভারতের কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) কমপক্ষে ৪৬ সদস্য নিহত হয়েছেন। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদ। এরপর থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পুলওয়ামা হামলার জবাবে কাশ্মীরে সীমান্ত রেখার কাছে ও বালাকোটে জয়েশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিতে মঙ্গলবার ভোরে অভিযান চালায় ভারতীয় নৌ-বাহিনী।
এতে প্রাণহানির যে দাবি করেছে ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান বলছে, ভারত যে স্থানে হামলা করেছে বলে দাবি করেছে, সেই স্থানে বিশ্বকে দেখে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি বলছে, ‘ভারতের ভুয়া দাবি দেখার জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ঘটনাস্থলে নেয়া হয়েছে।’
পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার জবাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর আকস্মিক হামলার পর যথাযথ জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদ। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি ঘাঁটি ও লঞ্চ প্যাডে হামলার পর দেশের সব বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে ভারত।
আকস্মিক ওই হামলার পর ভারতের সব বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে লুতিয়েন্স এলাকায় প্রতিরক্ষা স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অপরদিকে সীমান্তের কাছাকাছি পাঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকায় উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং পুলিশ। সূত্র:ডন,হিন্দুস্তান টাইমস।
পাকিস্তানে ভারতের হামলায় নিহত ৩০০
দেখুন, পাকিস্তানে ভারতীয় হামলার ভিডিও
২৬ ফেব্রুয়ারি,২০১৯