খেলাধুলা

আইসিসি বিশ্বকাপের যে ৭ রেকর্ড হয়তো কেউ ভাঙতে পারবে না

আইসিসি ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপ-বৈশ্বিক একটি টুর্নামেন্ট প্রতিবারই কিছু রেকর্ড সৃষ্টি হয়। আসলে রেকর্ড হয়ই ভঙ্গের জন্য। তবে তারপরও কিছু কিছু রেকর্ড আছে যা হয়তোবা অক্ষুন্নই থেকে যায়।

ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৯৭৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের প্রথম আসর। তারপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসেছে এর ১১টি আসর। ইংল্যান্ডের মাটিতে ৩০ মে শুরু হচ্ছে ১২তম আসরটি।

নিজেদের বিশ্বমানের নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে অনেক কিংবদন্তী ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় মঞ্চ হিসেবে পরিণত হয়েছে বিশ্বকাপ। যার ফলে অনেক রেকর্ড হয়েছে, আবার প্রতিটি আসরেই তা হয়েছে ভঙ্গ। তবে বিশ্বকাপে সাতটি রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে যা হয়তোবা কখনোই কিংবা আসন্ন আসরে অন্তত অক্ষুন্ন থাকবে।

►অস্ট্রেলিয়ার অপরাজিত থাকার রেকর্ড : ১৯৯৯-২০০৭ সালের মধ্যে ‘অপরাজিত’ শব্দটি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সঙ্গে সমার্থক ছিল। ‘হার মানা যাবেনা’ মনোভাব নিয়ে তারা এ সময়ে দেশ-বিদেশে বিশ্ব ক্রিকেট একক প্রাধান্য বজায়ে রেখেছে। পর পর তিনটি বিশ্বকাপ শিরোপা জয় থেকেই খেলাটিতে তাদের অবস্থানের কথা বুঝা যায়।

১৯৯৯-২০১১ চারটি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দল ৩৪ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়ে। যার মধ্যে ৩২টি জয় পায়, একটি টাই এবং একটি পরিত্যক্ত হয়। ১৯৯৯ সালে শুরু হয়ে ২০১১ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচে হেরে জয় রথ থামে অস্ট্রেলিয়ার। বর্তমান সময়ে দলগুলো সমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী। সুতরাং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ‘অপরাজিত’ থাকার রেকর্ডটি ভাঙ্গা খুব সহজ নয়।

► সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া-শচীন টেন্ডুলকার ও জাভেদ মিঁয়াদাদ : অনেক ক্রিকেট বোদ্ধার মতেই পাকিস্তানের এ ধরেকালের এবং সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের একজন জাভেদ মিঁয়াদাদ। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ দীঘ ২১ বছর গর্বের সাথে পাকিস্তান ক্রিকেটকে সেবা দেয়া দলটির সাবেক এ অধিনায়ক সর্বদা তার রীতি বিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ের জন্য সুপরিচিত।

এ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রথম ও একবারই ১৯৯২ বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল মিঁয়াদাদের ৪৩৭ রান। ১৯৯৬ সালে নিজের শেষ ও রেকর্ড ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলেন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে এ এলিট ক্লাবে যুক্ত হন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার।

এমনকি বর্তমানে ফরম্যার তুঙ্গে থাকা বিরাট কোহলির জন্যও সেটা সম্ভব নাও হতে পারে। কেননা নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলার সময়র কোহলির বয়স হবে ৩৮ বছর। সুতরাং ছয়টি বিশ্বকাপ খেলার রেকর্ডটা অক্ষুন্নই থেকে যাবে।

► সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক হিসেবে একটি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়-কপিল দেব : ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন কপিল দেব। তিনি অবসরে যাওয়ার পর অন্তত ২৫ বছর তার মত মেধাবী কাউকে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ভারতকে।

কপিল মাত্র ২৪ বছর বয়সে ১৯৮৩ আসরে ভারতকে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেন। গত ৩৫ বছরের রেকর্ড অনুযায়ী কোন বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করা সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়কও তিনি। তারপর থেকে আসন্ন বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়কদের গড় বয়স ২৭ প্লাস। এটা নিশ্চিত যে অন্তত আগাম পাঁচ বছর তার রেকর্ডটি অক্ষুন্ন থাকবে।

►৪ ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি-কুমার সাঙ্গাকারা : শ্রীলঙ্কায় জন্ম গ্রহণ করা সেরা খেলোয়াড়দের একজন কুমার সাঙ্গাকারা। বাঁহাতি এ স্টাইলস্ট ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে নিজের সেরা সময় কাটিয়েছে ২০১৫ আসর।
অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলের যাচ্ছেতাই পারফরমেন্সের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন সাঙ্গা। ক্রিকেট কিংবদন্তী স্যার ব্র্যাডম্যানের সমান ১০৮ দশমিক ২০ গড়ে সাত ম্যাচে চার সেঞ্চুরিসহ টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৪১ রান করেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চার ম্যাচে পর পর চারটি সেঞ্চুরি করেছিলেন সাঙ্গাকারা। এমন দুর্দান্ত নৈপুণ্যের পরও শ্রীলঙ্কাকে খুব বেশি দূর নিতে পারেননি তিনি। অত্যন্ত দুঃখ নিয়েই ক্যারিয়ার শেষ করতে হয় সাঙ্গাকারাকে।

► পর পর বলে সবচেয়ে বেশি উইকেট-লাসিথ মালিঙ্গা : ব্যতিক্রম ধর্মী এ্যাকশনের অধিকারী শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা বিশ্ব ক্রিকেটে এক দশক ধরে ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছেন মালিঙ্গা। সুপার এইট পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে পর পর চার বলে চার উইকেট শিকার করেছিলেন মালিঙ্গা।
৪৫তম ওভারের শেষ দুই এবং ৪৭তম ওভারের প্রথম দুই বলে মালিঙ্গা একে একে শন পোলক, হল, জক ক্যালিস এবং এনটিনিকে আউট করেন। যার মাধ্যমে পর পর চার বলে চার উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন মালিঙ্গা। যদিও শ্রীলঙ্কা জিততে পারেনি। তবে মালিঙ্গার রেকর্ড এখনো অক্ষত রয়ে গেছে।

► ৬০ ও ৫০ উভয় ফরম্যাটেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন-ভারত : ক্রিকেট জগতের অনেকেরই জানা নেই যে, দুই ভিন্ন ফরম্যাটেই (৬০ এবং ৫০ ওভার) বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র দল ভারত। ভারত প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে ১৯৮৩ আসরে। যা ছিল ৬০ ওভারের। এ ফরম্যাটের সর্বশেষ আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শিরোপা জয় করেছিল ভারত। তারপর ১৯৮৭ সাল থেকে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ হয়ে আসছে। এরপর ২০১১ সালে ভারত দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয় করে। একই সঙ্গে দুই ভিন্ন ফরম্যাটেই বিশ্বকাপ জয় করা একমাত্র দলে পরিণত হয় টিম ইন্ডিয়া। স্বাগতিক হিসেবে বিশ্বকাপ জয় করা প্রথম দলও ভারত।

► সবচেয়ে বেশি রান ও সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস-টেন্ডুলকার : বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফরমারদের একজন ছিলেন ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। বিশ্বকাপে ৪৪ ইনিংসে ৫৬ দশমিক ৯৫ গড়ে মোট ২২৭৮ রান তাকে বৃহৎ আসরে ধারাবাহিক পারফরমারদের একজনে পরিণত করেছে।

৬ সেঞ্চুরি এবং ১৫ হাফ সেঞ্চুরির মাধ্যমে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশোর্ধ (২১) ইনিংসের মালিকের আসনে বসিয়েছে শচীনকে। বর্তমান খেলোয়াড় তালিকায় শচীনের পরে সবেচেয়ে বেশি ৯৪৪ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলের। অন্তত আরো কয়েক বিশ্বকাপ পর্যন্ত রেকর্ড অক্ষুন্ন থাকতে বাধ্য।

বার্তা কক্ষ
১৮ এপ্রিল, ২০১৯

Share