চাঁদপুর

চাঁদপুরে ৭ উপজেলায় বিএনপির একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী ইব্রাহীম জুয়েল!

চাঁদপুরের সম্ভাব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলার ৭টি উপজেলায় একমাত্র বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল! তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

তার সাথে এ নির্বাচনে লড়ছেন আ.লীগ মনোনিত একক প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান কালু, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) অ্যাড. মহসিন খান।

তবে সারাদেশের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় প্রতীকে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন ও বামদলসহ দেশের অধিকংশ রাজনৈতিক দল।

এসব রাজনৈতিক দলগুলো দাবি করছে, গত ৩০ ডিসেম্বেরের একতরফা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আর দলীয় সরকারের অধীনে দেশে কোন সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। ফলে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আর অংশগ্রহণমূলক হচ্ছেনা ভোটারদের কাছে।

এদিকে চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. ইব্রাহীম জুয়েল চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় এ জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা সমীকরণ চলছে।

তবে তিনি কি বিএনপির একক প্রার্থী না স্বতন্ত্র প্রার্থী এ নিয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সর্ব মহলে। যদিও তার সমর্থকরা দাবি করছে, তিনি অংশ নিচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই। কারণ হিসেবে তারা দাবি করছে, এই ছাত্রনেতার বর্তমান বিএনপির রাজনৈতিক দলীয় কোন পদ-পদবী নেই।

তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই অংশ নিচ্ছেন বলে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর হচ্ছে। তবে এই ছাত্রনেতা শেষ পর্যন্ত ভোট যুদ্ধে থাকলে নির্বাচনে ভোটের সমীকরন পাল্টে যাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, জুয়েলের অংশগ্রহণের মধ্যেদিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাচন প্রথমত হচ্ছে অংশগ্রহণ মুলক। দ্বিতীয়ত ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে তার রয়েছে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যপক পরিচিতি। ফলে ভোটের হিসেবের সমীকরন শেষ পর্যন্ত কি হয়, তা আগাম অনুমান করা এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছেনা।

তবে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা কাজী মো. ইব্রাহীম জুয়েল যে একজন হেভিওয়েট প্রার্থী তা জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর রয়েছে। কারন হিসেবে জানা গেছে, এই এই ছাত্রনেতা দেশে সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকারে সময়ে দেশনেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে টেলি কনফারেন্স করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেই তোলপাড় সৃষ্টি করে ছিলেন। ফলে ঐ সময়ে এ ছাত্রনেতা দেশের সব গণমাধ্যমের কল্যাণে জাতীয়ভাবেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। পরবর্তীতে দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থা ফিরে আসলেও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সুবিধাভোগী একটি অংশের রোষানলের শিকার হয়ে তিনি দলীয় পদপদবী এমনকি বহিষ্কারের শিকার হন।

তবে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাটিয়ে উঠতে না পারলেও দেশের গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখেন। পরবর্তীতে কেবল ক্লিন ইমেজের উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদেরও রোষানলের শিকার হন। ফলে বেশ কয়েকটি মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় কারাবরণ করতে হয়েছে এই ছাত্রনেতাকে।

এই যখন কাজী জুয়েলের রাজনৈতিক ভাগ্যবরণ, ঠিক তখনি তিনি সমাজসেবায় এগিয়ে আসেন সাধারণ মানুষের পাশে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কল্যাণে ও দেশের উন্নায়নে তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জুয়েলের সমর্থকরা দাবি করছেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে।

এ বিষয়ে কাজী মো. ইব্রাহীম জুয়েল চাঁদপুরের গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, দেশের বিদ্যামান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারপরও সাধারণ মানুষ আশা করে প্রশাসন এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠ করলে, তারা তাদের ভোটাধীকার প্রয়োগ করতে পারবে। কেবল ভোটাররা যাতে তাদের ভোটাধীকার প্রয়োগ করতে পারে, এজন্যে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ তৈরি করছেন বলে তিনি দাবি করেন।

তবে তিনি আরো দাবি করেন, জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় বিভিন্ন সময়ে মামলা-হামলা ও কারাবরণের শিকার যেমন তিনি হয়েছেন, তেমনি তার দলের অগনিত সমর্থক ও কর্মী মামলার পাশাপাশি কারানির্যাতনে শিকার হন।

কারানির্যাতিত এসব দলীয় নেতাকর্মীদের অধিকাংশদের সাথে তার রয়েছে ব্যক্তিগত সম্পর্ক। ফলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক শুভানুদ্যায়ীরাও উৎসাহিত করছেন এবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে।

তাছাড়া গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিপুল তরুন প্রজম্ম তাদের ভোটাধিকার হতে বঞ্চিত হয়েছেন। সম্ভবনাময়ী এসব তরুন প্রজম্মের একজন প্রার্থী হিসেবেও তাদের নিরব আহ্বানও তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করছে বলে কাজী জুয়েল দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, দলীয় প্রতীকে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাঁদপুর সদর উপজেলায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ছিলেন, চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান সফিকুজ্জামান। তার সাথে ওই সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন জেলা আ.লীগের শীর্ষ ও হেভিওয়েট নেতা ইউুসুফ গাজী। ফলে এ উপজেলাটি বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যপক পরিচিত।

তবে এবারের নির্বাচনে আ.লীগের প্রার্থী হিসেবে নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান ততটা হেভিওয়েট নয় বলেও জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে চাউর রয়েছে। এখন শুধু দেখার পালা প্রশাসন শেষ পর্যন্ত কতটা অবাদ ও শান্তিপূর্ন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি ও ভোটারদের ভোটাধীকার প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ মার্চ, ২০১৯

Share