সরাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও চলতি বছরে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ১৭ জুলাই বুধবার সারাদেশের ন্যায় দুপুর ২টায় একযোগে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
এবছর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৬ জেলায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় গত ৫ বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেশি। বোর্ডে এবার পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৭৫ জন শিক্ষার্থী। শতভাগ পাস করেছেন ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লা বোর্ডে একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে তিনটি। তবে এর মধ্যে চাঁদপুরের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।
এবার এইচএসসি পরীক্ষায় এ বোর্ডে অংশ নিয়েছিলেন ৯৪ হাজার ৩৬০ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪৩ হাজার ২২২জন ছাত্র ও ৫১ হাজার ১৩৮ জন ছাত্রী। পরীক্ষায় পাস করেছেন ৭৩ হাজার ৩৫৮ জন। এর মধ্যে ৩৩ হাজার ৩৩২ জন ছেলে ও ৪০ হাজার ২৬ জন মেয়ে।
এবছর চাঁদপুরে অকৃতকার্যের (ফেলের) সংখ্যা বাড়লেও অতিতের তুলনায় কিছুটা কমেছে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা। চাঁদপুর শহরের সেরা চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জিপিএ পেয়েছে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ১৫জন, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ ৩৪জন ও আল-আমিন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২১জন ও বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাত্র ২টি।
এই চার প্রতিষ্ঠান থেকে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭২ জন। তবে জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ভরাডুবি করেছে পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ ও চাঁদপুর রেসিডেন্সিয়াল কলেজ। এবছর এই ২ কলেজ থেকে একটিও জিপিএ-৫ নেই।
এ বছর চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শাখা থেকে মোট ৫শ ৩৬ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
এরইমধ্যে ৪শ ৮৬ জন কৃতকার্য হয়। এর মধ্যে তিনটি বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা হলো মানবিক বিভাগ থেকে মুক্তা আক্তার রুমি, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৯ জন হলো মিরাজ হোসেন, মোঃ রায়হান উদ্দিন, এম.এ তাহের, মোঃ আবদুল্লাহ সাদিদ চৌধুরী, নাহিদ হাসান, জাহিদুল ইসলাম পাটওয়ারী,মাহির তাজোয়ার হক, স্বজন সাহা, মাসুদ বিল্লাহ হৃদয়।
ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৫ জন হলো সুপ্ত সাহা, মারুফ হোসেন, মোঃ নূরে আলম মিথেন, পাপলু মজুমদার, মনোজ কান্তি দাস। মানবিক বিভাগ থেকে ১শ ৯৬জন পরীক্ষা দিয়ে ১শ ৬৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২শ ৬জন পরীক্ষা দিয়ে ১শ ৯২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে ১শ ৩৪ জন পরীক্ষা দিয়ে ১শ ২৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। মোট পাশ করেছে ৪শ ৮৬ জন। গড় পাশের হার ৯০.৬৭।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ.এস.এম দেলওয়ার হোসেন পিএএ বলেন, যারা এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য করেছে তারা এসএসসি পরীক্ষায় তেমন ভালো ফলাফল করতে পারেনি। তারপরও আমরা এইসব শিক্ষার্থীদেরকে আমাদের কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলাম। তারা এইচএসসি পরীক্ষায় এ বছর চাঁদপুর সরকারি কলেজের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তাদের এ্ই ফলাফলের জন্য আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। বর্তমান সরকার শিক্ষাকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা প্রসারে আমরা বদ্ধ পরিকর।
২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় চাঁদপুর সরকারি কলেজে গড় পাশের হার ছিল ৭২.৮২। এ বছর ভালো ফলাফলের জন্য আমরা শিক্ষার্থীদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা শিক্ষার্থীদেরকে যেভাবে অধ্যায়ন করাচ্ছি তাতে আগামীতে এ কলেজের ফলাফল আরও ভালো হবে।
চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এই তিনটি বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৯শ ৩৬ জন। পাশ করেছে ৭শ ৭৯ জন। এর মধ্যে ৩৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, তাদের কলেজ থেকে এ বছর ভালো ফলাফল অর্জন করেছে।
আর এই ভালো ফলাফলের জন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা যদি কলেজে মনোযোগী হয় তাহলে আগামীতে আরো ভালো ফলাফল করা সম্ভব হবে। ২০১৮ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৮শ ৮১ জন। পাশ করেছিল ৬শ ৬৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১২ জন। যা বিগত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪ জন।
এরা হলো সিদরাতুল মুনতাহা মীম, সায়মা আক্তার, ফারিহা বিনতে ফারুক, মাহমুদা আক্তার, মানছুরা আক্তার, মিমসা মেহজাবিন ইসা, তানজিলা হোসেন তামান্না, রায়হানা তাসনিম, অর্পিতা রায়, সাদিয়া আহমেদ পুষ্পিতা, ইসরাত জাহান নিঝুম, ইসরাত জাহান ইলমা, খায়রুন মেহজাবিন অর্পা, সাদিয়া ইসলাম শান্তা, রুমানা ইসলাম রিয়াম, জান্নাতুল আক্তার তামান্না, রিনি কর্মকার, সাবিয়া আফরিন প্রভা, ফারাহ উলফাত জিয়ান, নুসরাত জাহান ওহি, সাউদা বিনতে ওয়াহিদ, নুসরাত জাহান মুমু, সুমাইয়া সুমু, মোসাঃ সানজিদা আক্তার, মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৫ জন হলো তিথি রাণী দে, জান্নাতুল নাঈম বিনু, রোজানা তামান্না, আনিকা রহমান, সিদরাতুল মুনতাহা নায়না, ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৫ জন হলো সাদিয়া আক্তার, ইসরাত জাহান, নুরজাহান, রওনক তাসফিয়া, তাপসিনা ইসলাম সিনহা। গড় পাশের হার ৮৩.২৩।
আল-আমিন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪শ৭৭ জন। পাশ করেছে ৪শ ১৭ জন। গড় পাশের হার ছিল ৮৭.৪২। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১শ ৮৭ জন। পাশ করেছে ১শ ৭৮ জন।
জিপিএ৫ পেয়েছে ১৬ জন। ব্যবসা শিক্ষা শাখা থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১শ ৩৯ জন। পাশ করেছে ১শ ১১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন। মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ১শ ৫১ জন। পাশ করেছে ১শ ২৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে পরিচালিত বিএম শাখা থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৫৬ জন। পাশ করেছে ৫৫ জন। পাশের হার ৯৮.২১।
আল-আমিন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন সিকদার জানান, তাদের কলেজ থেকে এ বছর ৪শ ৭৭ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ২১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আল-আমিন স্কুল এন্ড কলেজের ফলাফল আরো ভালো হওয়া প্রয়োজন ছিল। তবে আগামীতে যেন আরও ভালো ফলাফল করা যায় আমরা সেই চেষ্টাই করব।
চাঁদপুর রেসিডেন্সিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৬৯ জন। পাশ করেছে মাত্র ৪২ জন। গড় পাশের হার ৬০.৮৭। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জানান, আমরা মূলত অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের পেয়ে থাকি। কারণ ভালো শিক্ষার্থীরা শহরের বড় দুটি কলেজে ভর্তি হয়। তার পরেও আমরা এই ফলাফলে সন্তুষ্ট।
বাবুর হাট স্কুল এন্ড কলেজে থেকে ৪২৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে কৃতকার্য হয় ৩৩৯ জন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ৮৬। এই কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২জন।
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
১৭ জুলাই ২০১৯