প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করায় স্মার্ট ফোন, মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ ও সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে।
বাড়তে পারে আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধ, আমদানিকৃত মধু, ওলিভ অয়েল, আইসক্রিমের দাম। এ ছাড়া সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, সান ফ্লাওয়ার তেল, সরিষার তেলের আমদানি পর্যায়ের মূসক আরোপ করায় বাড়তে পারে দাম। ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করায় এলপি গ্যাস, গুঁড়া মসলা, টমেটো কেচাপ, চাটনি, ফলের জুস, টয়লেট টিস্যু,
টিউবলাইট, চশমার ফ্রেমের দাম বাড়তে পারে। একই কারণে দাম বাড়বে প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী, সিআর কয়েল, জিআই ওয়্যার, তারকাঁটা, স্ক্রু, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসনসহ গৃহস্থালি সামগ্রী, ব্লেড, ট্রান্সফরমার, সানগ্লাস, রিডিং গ্লাসের।
র সুগার ও রিফাইন সুগারের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়ছে, যা আগে ছিল ২০ শতাংশ। ফলে চিনির দামও বাড়বে। অপটিক্যাল ফাইবার কেবল, আমদানিকৃত মোটরসাইকেল, মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ, এয়ারকন্ডিশনার, মোবাইল ফোন, রডের দাম বাড়তে পারে।
এ ছাড়া সোনা ও রুপার জুয়েলারি, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, লঞ্চের এসি কেবিন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ইনডেনটিং, আসবাবপত্র, পরিবহন ঠিকাদার, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ওপর ভ্যাট দেওয়ার প্রস্তাব করায় এসব ক্ষেত্রে গ্রাহকদের খরচ বাড়তে পারে। হেলিকপ্টারের সেবা মূল্যের ওপর ভ্যাটের পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। ফলে হেলিকপ্টারে যাতায়াতের ক্ষেত্রে খরচ বাড়বে।
যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, অ্যাম্বুলেন্স ও স্কুলবাস ছাড়া সব ধরনের পরিবহন রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট নবায়ন, ফিটনেস সনদ, মালিকানা সনদ নিতে এবং নবায়ন করতে বিআরটিএ নির্ধারিত সেবামূল্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপের কারণে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়বে।
পোশাকের মূল্যের ওপর আড়াই শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে জামা-কাপড়ের দাম বাড়তে পারে। জামা-কাপড় কেনার পাশাপাশি তৈরি করতেও খরচ বাড়তে পারে। কারণ জামা-কাপড় তৈরির ওপর ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে।
এদিকে আগামী বাজেটে মূসক অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে বেশ কিছু পণ্যের ওপর। এতে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পাউরুটি ও বনরুটি, হাতে তৈরি বিস্কুট ও কেক।
বাজেটে দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত ৪৩টি উপকরণের। এর মধ্যে রয়েছে ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, লিফট প্রস্তুতকারী শিল্পে ব্যবহৃত আমদানি করা সব উপকরণ।
আমদানি শুল্ক কমানোয় দাম কমতে পারে স্বর্ণের বারের। একই কারণে তুলা বীজ, পাম নাটস, রেফ্রিজারেটর শিল্পের স্টিল প্লেটের দামও কমতে পারে। আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাবে কমতে পারে চার্জার কানেকটর পিন, পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্য শিল্পে ব্যবহৃত তিনটি উপকরণ, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপন ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ, কমপ্রেসর প্রস্তুতকারী শিল্পে ব্যবহৃত আমদানি করা সব উপকরণ,
জুতা শিল্পের বিভিন্ন উপকরণ। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতির দাম কমবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লিফট, রেফ্রিজারেটর, কম্প্রেসার, এয়ার কন্ডিশনার, মোটরসাইকেল ও যন্ত্রাংশ, মোটর, মোল্ড ও পাদুকা শিল্পকে সুরক্ষার জন্য এ খাতে উপকরণ আমদানিতে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে এসব পণ্যের দাম কমবে। কৃষি খাতে প্রণোদনার জন্য কৃষি যন্ত্রপাতি যেমন পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার অপারেটেড সিডার, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার,
লোলিস্ট পাম্প, রোটারি টিলারের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত ব্যবসায় শোরুমের ওপর মূসক অব্যাহতি। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জোগানদার ও বিদ্যুৎ বিতরণকারী সেবার ওপর মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেজা) বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাস, জোগানদার ও বিদ্যুৎ বিতরণকারী সেবার ওপর মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্মাণ সংস্থা, কনসালটেন্সি ও সুপারভাইজরি ফার্ম, জোগানদার ও আইন পরামর্শক সেবার ওপর মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ক্ষেত্রে ফরোয়ার্ডার্স, ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং সংস্থা, বিমা কোম্পানি, জোগানদার ও ব্যাংকিং সেবার ওপর মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব ক্ষেত্রে খরচ কমবে।