জাতীয়

দূর নয় বরং ‘ক্ষুদ্র ঋণে’ দারিদ্রকে লালন পালন করা হয় : প্রধানমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানের এ মন্তব্য আসে।

তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল, কেউ কেউ আমরা দেখেছি ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে খুব বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করেছে।… একসময় আমরাও এটাকে সমর্থন দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এর ফলে বোধ হয় মানুষ দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠতে পারবে।

“কিন্তু যখন আমরা বিষয়টা আরও গভীরভাবে দেখলাম, তাতে দেখলাম, আসলে এর মাধ্যমে ঠিক দারিদ্র্য বিমোচন হয় না, দারিদ্র লালন পালন হয়।”

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর প্রতিষ্ঠাকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসকে ।

সে দিকে ইংগিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে কেউ কেউ ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা সেজে অনেক ভালো নামটাও করে ফেলেছেন। কিন্তু দেখা যায় যে হয়ত নিজে নাম কামিয়েছেন, কিন্তু দেশের মানুষ ততটা তার সুফল পেতে পারেনি। এটা হল বাস্তব।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই তখনকার বিআরডিবির মাধ্যমে এ ঋণ দেওয়া শুরু করেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “মানুষকে কীভাবে সমবায়ের মাধ্যমে একত্রিত করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে কীভাবে তাদের দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে আনা যায়, সেই পরিকল্পনাটাই জাতির পিতা নিয়েছিলেন।”

আর দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সব সময় একটা প্রচেষ্টা নিয়েছি। দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে কী কী কাজ করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা আমাদের কর্ম পরিকল্পনা নিই।

“আমাদের মূল শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য। কাজেই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে। দারিদ্র্যের হাত থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কর্মপরিকল্পনা।”

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিয়ে ‘উন্নত সমৃদ্ধ’ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রতিটি পদক্ষেপের একটাই লক্ষ্য- টেকসই উন্নয়ন আমরা করব, এসডিজি বাস্তবায়ন করব।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে অন্ধকারের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ‘হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের’ ক্ষমতা পরিবর্তনের ঘটনাগুলোও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

“আমরা দেখেছি একটা সময় যখন মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় থাকে-আসলে সরকার থাকে দুর্বল। তাদের কোনো ভিত্তি থাকে না। জনগণের কোনো শক্তি থাকে না। এমন একটা অবস্থায় পরের কাছে হাত পেতে চলা, আর নিজেরাই অর্থশালী, সম্পদশালী হওয়া… দেশের মানুষ ক্ষুধা-দারিদ্র্য যন্ত্রণায়।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কৃষকদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি শিল্পায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কৃষকদের যত রকমের সহযোগিতা আমরা করি, পাশাপাশি শিল্পায়নের দিকেও আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিই। এই শিল্পায়নটা যেন সারা বাংলাদেশে হয়, আবার কৃষি জমি যেন আমাদের রক্ষা পায়- সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ১০০টা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি।”

যত্রতত্র শিল্প কারখানা করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “টাকা পেলেই অমনি জমি কিনে শিল্প করবে তা না। আমরা ভূমি ব্যবহারের জন্য একটা নীতিমালা প্রণয়ন করে… ইতোমধ্যে বলা আছে, তিন ফসলের জমি বা দুই ফসলি জমি কেউ নষ্ট করতে পারবে না। সেই নীতিমালা যেন যথাযথভাবে কার্যকর হয় সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। কোনো সুবিধা তারা পাবে না যদি কেউ তিন ফসলি জমি নষ্ট করে।

“মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আমরা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। কারো কাছে আমরা হাত পেতে চলতে চাই না।”

খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির ওপরও সরকার জোর দিচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আর এক্ষেত্রে অবদান রাখায় পিকেএসএফের প্রশংসা করেন তিনি।

বিশ্বে বাংলাদেশকে এখন ‘উন্নয়নের বিস্ময়’ বলা হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করে যে এত দ্রুত উন্নয়ন করলেন, ম্যাজিকটা কী। আমার এখানে উত্তর খুব স্পষ্ট‌। ম্যাজিক বলে কিছু না। দেশকে ভালোবাসা, মানুষকে ভালোবাসা আর নিজের দেশকে জানা, নিজের দেশের জন্য কাজ করা। আমরা নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দেশের জন্য কাজ করছি।”

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বার্তা কক্ষ, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

Share